প্রেমিকার প্ররোচনায় অভিমানে নিজেকে শেষ করেছেন প্রভাস মাকাল। দাবি তাঁর পরিবারের। —নিজস্ব চিত্র।
বছর দশেক ধরে পুত্রের সঙ্গে সম্পর্কে থাকলেও তাতে ইতি টানতে চেয়েছিলেন প্রেমিকা। এমনকি, প্রেমিককে মরে যেতেও বলেছিলেন। শনিবার রাতে সে জন্যই অভিমানে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁদের পুত্র। কোচবিহারের এক যুবতীর বিরুদ্ধে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানায় এমনই অভিযোগ করেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। রবিবার এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, চ্যাটার্জিহাট থানার চারাবাগান তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা প্রভাস মাকালকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কোচবিহারের এক যুবতীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে মৃতের পরিবার। অভিযোগপত্রে তাঁদের দাবি, শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গলায় শাড়ির ফাঁস জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বছর তেত্রিশের প্রভাস। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর, বর্তমানে গাড়ি সারাইয়ের কাজ করতেন প্রভাস। বছর দশেক আগে সল্টলেকে একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন তিনি। সে সময় থেকেই কোচবিহারের কলেজ মোড়ের এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁদের নিয়মিত ফোনে কথাবার্তাও হত। পরে ওই যুবতী অন্যত্র বিয়ে করেন। কিন্তু কিছু দিন বাদে ওই যুবতীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রভাসের বাবা ধনঞ্জয় মাকাল বলেন, ‘‘ওই যুবতী এবং তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বেড়াতেও গিয়েছিল প্রভাস। সম্প্রতি সান্দাকফু ঘুরে এসেছে তারা।’’ সম্প্রতি প্রভাসের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে শুরু করেছিলেন তাঁর মা নীলিমা মাকাল। তবে ওই যুবতীকেই বিয়ে করতে চান বলে অনড় ছিলেন প্রভাস।
পরিবারের দাবি, দিন কয়েক আগে কোচবিহারে ওই যুবতীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রভাস। সে সময় তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা বলেন ওই যুবতী। এর পর নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। রবিবার মোবাইল ফোন সুইচড অন হলে প্রেমিকাকে ফোন করেন প্রভাস। সে সময় তাঁকে অপমান করেন ওই যুবতী। প্রভাসকে মরে যেতেও বলেন বলে অভিযোগ পরিবারের। এমনকি, তাঁকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারির হুমকিও দেওয়া হয়। এর পর থেকে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে নিজের ঘরেই বসে ছিলেন প্রভাস।
খাবারের হোম ডেলিভারির ব্যবসা রয়েছে প্রভাসের মা-বাবার। তাঁদের দাবি, শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়িতে হোম ডেলিভারির জন্য খাবার তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সে সময় নিজের ঘরেই গলায় শাড়ি জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন প্রভাস। জানলার ফাঁক দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রভাসকে দেখতে পান তাঁর মা। এর পর প্রভাসকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে ওই যুবতী। তার বিরুদ্ধে চ্যাটার্জিহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’
এই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে চ্যাটার্জিহাট থানার পুলিশ।