সুদাম গিরি, যাঁর ছবি ভাইরাল হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষকের পরীক্ষা (টেট) পাশ করা তো দূরঅস্ত্, পরীক্ষাতেই বসেননি তাঁরা। তা সত্ত্বেও কলকাতায় মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির সামনের ধর্নামঞ্চে গিয়ে পোস্টার হাতে চাকরিপ্রার্থীদের পাশে বসলেন এগারো জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক! যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ‘আমরা টেট পাশ এবং প্রশিক্ষিত, তবুও আমরা বঞ্চিত’, এই বয়ানের পোস্টার হাতে নিয়ে বিজেপির ওই কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ দেখানোর ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। যাঁদের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চে দেখা গিয়েছে, তাঁদেরই এক জন নিজেকে বিজেপিকর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন। এই নিয়ে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, ইচ্ছে করে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগানো হচ্ছে। শাসকদল যেখানে আন্দোলনকারীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, সেখানে বিরোধীরা চাইছেন আন্দোলন জিইয়ে রাখতে। যদিও এই বিতর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বক্তব্য, ধর্নামঞ্চে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সকলেই আসেন। তার পরেও তাঁদের আন্দোলন সম্পূর্ণ ‘অরাজনৈতিক’।
চাকরিপ্রার্থীদের পোস্টার হাতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জানা গিয়েছে, তাঁরা সকলেই হাওড়ার শিবপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। যে যুবকের ছবি ভাইরাল হয়েছে, তাঁর নাম সুদাম গিরি। তিনি পেশায় মাংসবিক্রেতা। কাশীনাথ চ্যাটার্জি লেনে তাঁর একটি মুরগির মাংসের দোকান রয়েছে। দলবল নিয়ে তিনি কেন চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চে গেলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে সুদাম বলেন, ‘‘বিজয়া দশমীর দিন মিষ্টি বিতরণ আর শুভেচ্ছা জানাতেই এলাকার কয়েক জনের সঙ্গে ধর্নামঞ্চে গিয়েছিলাম আমি।’’ নিজেকে বিজেপিকর্মী বলে পরিচয় দিলেও সুদামের বক্তব্য, ধর্নামঞ্চে বিজেপির পক্ষ থেকে যাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ধর্নামঞ্চে যেতে আন্দোলনকারীরা তাঁদের পাশে থাকার অনুরোধ করেন। সেই কারণেই পোস্টার নিয়ে ওঁদের পাশে বসে পড়েছিলাম। সেই ছবিই কেউ ভাইরাল করে দিয়েছে।’’
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চকে কুৎসিত ভাবে ব্যবহার করছেন বিরোধীরা। সেখানে যে কেউ ঢুকে যাচ্ছেন। চাকরিপ্রার্থীদেরও বলব, আপনাদের তো চাকরির আশ্বাস দিয়েছে সরকার। সরকারের উপর ভরসা রাখা উচিত।’’
সুদাম অবশ্য জানান, তিনি নিজে কোনও দিন টেট দেননি। পোস্টারে কী লেখা ছিল, তা-ও তিনি দেখেননি। দশমীর দিন ধর্নামঞ্চে যাওয়া পবিত্র কুমার নামে অন্য এক বিজেপিকর্মী বলেন, ‘‘ওই ঘটনাটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। তার সঙ্গে সুদামের চাকরির দাবির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ ধর্নামঞ্চে সুদামদের উপর উপস্থিতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, ‘‘পোস্টার নিয়ে বসলেই কেউ আন্দোলনকারী হয়ে যান না। এটা কোনও বিষয়ই নয়। আসলে আন্দোলনকারীদের বিপাকে ফেলতেই এই ধরনের বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। বিজেপি সব সময় আন্দোলনকারীদের পাশে থাকবে।’’
পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসক শিবিরও। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘সরকার আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। বিরোধীরা সেখানে তাঁদের দলের লোক ঢুকিয়ে আন্দোলন জিইয়ে রাখতে চাইছেন। এটাই বিজেপির ছক। ভাইরাল হওয়া ছবিই তার প্রমাণ।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে কুণাল বলেন, ‘‘১০ হাজার ৩২৩ জনের চাকরি চলে গেল ত্রিপুরায়। সিপিএম এবং বিজেপির কোনও লজ্জা নেই। ওঁরা আবার এখানে আন্দোলন দেখাতে এসেছেন।’’
যদিও এই বিতর্কে জড়াতে না চেয়ে টেট আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা অচিন্ত্য সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন এবং সংগঠন সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক। এখানে যেমন শুভেন্দু অধিকারী আসেন, তেমনি আসেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সকলে এসে আমাদের সঙ্গে বসেন। প্ল্যাকার্ড ধরে আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করেন। সুদাম গিরিও দশমীর দিন এসেছিলেন। ওঁরা জনা দশেক ছিলেন। আমাদের মিষ্টি খাইয়ে যান। আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। সাংগঠনিক ভাবে আমাদের সঙ্গে ওঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁরা কেবল আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্যই এসেছিলেন। বিষয়টিকে বিকৃত ভাবে দেখা হচ্ছে। ধর্নামঞ্চে যে কোনও ব্যক্তিকে আমরা স্বাগত জানাই। এক জন শিশু প্ল্যাকার্ড ধরলে কি তিনিও চাকরিপ্রার্থী হয়ে যাবেন?’’