চলতি বছরেও স্কুলে সারা বছরে মোট ছুটির সংখ্যা ৬৫। ফাইল চিত্র।
কয়েক দিন তাপপ্রবাহের পরে স্কুলে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা এবং সেই ছুটি বাড়িয়ে ৪৫ দিন করায় শিক্ষা থেকে সর্বস্তরে বিতর্ক চলছে। সারা বছরের ছুটি কী ভাবে হবে, তা নিয়ে শিক্ষা দফতর পরিকল্পনার অভাবে ভুগছে বলে শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, আগে স্কুলে সারা বছরে ৮৭ দিন ছুটি দিত শিক্ষা দফতর। এখন তা কমে ৬৫ দিন হলেও অধিকাংশ সময়েই ছুটি ৮৭ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকেরা মনে করেন, পরিকল্পনা করে ছুটি দিলে তা ৬৫ দিন বা তার আশপাশেই রাখা যেত। হঠাৎ হঠাৎ লম্বা ছুটি দেওয়ার কোনও দরকার পড়ত না, পড়াশোনার ধারাবাহিকতাও নষ্ট হত না।
অনেক শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, সারা বছরে ছুটির ‘রস্টার’ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কম গুরুত্বপূর্ণ দিনকে ছুটির তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে অনেক সময়েই গরমের ছুটিতে হাত পড়ে যাচ্ছে। যদিও রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যথেষ্ট পরিকল্পনা করেই সারা বছরের ছুটির ‘রস্টার’ করা হচ্ছে।
চলতি বছরেও স্কুলে সারা বছরে মোট ছুটির সংখ্যা ৬৫। সেখানে গরমের ছুটি দেওয়া হয়েছিল ১১ দিন। কিন্তু তীব্র গরমের জন্য সেই ছুটি বাড়িয়ে ৪৫ দিন করা হয়েছে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মকালে এমন পরিস্থিতি শুধু এই বছরেই হয়নি।
নথি বলছে, করোনা ছাড়াও তার আগের বেশ কয়েক বছরে গরমের ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, অত্যধিক গরমের জন্য ছুটি বাড়ানো হয় ২০০৮ সালেও।
শিক্ষক মহলের একাংশের প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের মতো গ্রীষ্মপ্রধান রাজ্যে গরমের ছুটি ১১ দিন দেওয়ার যুক্তি কী? বিশেষ করে যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতি বারেই অত্যধিক গরমের জন্য ছুটি শেষ পর্যন্ত বাড়াতে হচ্ছে? এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘২০২০ সালে গরমের ছুটি ছিল ১৩ দিন। পুজোর ছুটি ২৬ দিন। তার আগের বছরগুলিতেও দেখা গিয়েছে, গরমের ছুটি কম। পুজোর ছুটি অনেকটাই বেশি। পুজোর ছুটি কিছু দিন কমিয়ে, গরমের ছুটি বাড়িয়ে ৬৫ দিনের ছুটির ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।’’
শিক্ষকদের বক্তব্য, দেখা যাচ্ছে, শিক্ষা দফতর যখন থেকে গরমের ছুটি দিচ্ছে, তার অনেক আগে
থেকেই গরম পড়ে যাচ্ছে। তাই গরমের ছুটি এগিয়ে আনতে হচ্ছে। পরিকল্পনা করে গরমের ছুটি দিলে হঠাৎ পরিকল্পনাহীন ভাবে গরমের ছুটি বাড়াতে হত না। পরিকল্পনাহীন ভাবে গরমের ছুটি দেওয়ার ফলে এক দিকে পড়াশোনার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, শিক্ষককুল বা ছাত্রছাত্রী, কেউই আগাম কোনও পরিকল্পনাও করতে পারছেন না।
কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি প্রথমে ছিল ৩০ দিন। তার পরে ২৪, ১৮, ১৩ দিন থেকে কমতে কমতে এখন ১১ দিনে ঠেকেছে, যা বাস্তবোচিত নয় বলেই মনে করি আমরা। তাই স্কুলের বার্ষিক ছুটির মোট দিন ৮৭, ৮০ থেকে ৬৫ দিনে এসে ঠেকলেও আদতে গরমের কল্যাণে তা কোনও কোনও বার ৮৭ দিনেরও বেশি হয়ে যাচ্ছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।