By Election: ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চান না অধীর, অন্য সমীকরণ খুঁজছে রাজনৈতিক মহল

বাংলায় বিধানসভা ভোটে বিজেপি-কে পর্যুদস্ত করে গোটা দেশেই মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে অন্য উচ্চতায় নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন মমতা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৫:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চায় না কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর এই প্রস্তাবে এআইসিসি-র আনুষ্ঠানিক সিলমোহর এখনও বাকি। তবে এমন সিদ্ধান্ত হলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অন্য সমীকরণের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক শিবির।

Advertisement

প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে স্থগিত থাকা দু’টি কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচন ও চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন কবে হবে, তার ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ফলাফল এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গিয়েই কংগ্রেসের অন্দরে উঠে এসেছে ভবানীপুরে প্রার্থী না দেওয়ার প্রসঙ্গ। এই ভাবনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু বলছেন, ‘‘এখনও এআইসিসি আমাদের কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে আমার মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার সবে ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় প্রার্থী হচ্ছেন। এই অবস্থায় যতটুকুই ভোট পাই না কেন, কংগ্রেসের প্রার্থী না দেওয়াই উচিত।’’ এআইসিসি-র এখন যা মনোভাব, অধীরবাবুর এমন প্রস্তাবে তারা এক কথায় রাজি হবে বলেই কংগ্রেস সূত্রের ইঙ্গিত।

বাংলায় বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে গোটা দেশেই মোদী-বিরোধী মুখ হিসেবে অন্য উচ্চতায় নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন মমতা। আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে অ-বিজেপি শিবিরে নানা সমীকরণের ভাবনা চলছে। কোভিড পরিস্থিতিতে সব দিক অনুকূলে থাকলে আগামী ২১ জুলাই তৃণমূলের বিজয় সমাবেশকে মোদী-বিরোধী মঞ্চের চেহারা দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই বলে রেখেছেন মমতা। তার আগেই কেন্দ্র-বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূল নেত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন এআইসিসি-র নেতারা। করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা হোক বা মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে বদলি— নানা বিষয়ে রাজ্যের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন অধীরবাবুও। এমন এক পরিস্থিতিতে মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী না দেওয়ার ভাবনা স্বভাবতই বৃহত্তর তাৎপর্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Advertisement

অধীরবাবুদের ভাবনাকে স্বাগত জানাচ্ছে তৃণমূলও। দলের সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কথায়, ‘‘ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন, তা সুনিশ্চিত। তবে কংগ্রেসের এমন সিদ্ধান্ত বা ভাবনা হয়ে থাকলে তা অবশ্যই শুভ রাজনৈতিক সঙ্কেত।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘এটা কিন্তু কোনও নির্বাচনী আঁতাঁত নয়। প্রতীকী একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে না চাইলেও শামসেরগঞ্জ বা শান্তিপুরের মতো আসনে আমরা লড়ব।’’

বামেদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে ভবানীপুর আসন কংগ্রেসের ভাগেই পড়ে। পাঁচ বছর আগে ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে প্রথমে ময়দানে নেমেছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র, পরে তাঁকে সরিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন দীপা দাশমুন্সি। তখন বিজেপির দাপট ছিল না, তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছিলেন দীপা। মমতা এ বার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ায় ভবানীপুরে তৃণমূলের হয়ে লড়েছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী হয়ে যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান যৎসামান্য ভোট পেয়েছেন। শোভনদেব ইস্তফা দেওয়ার পরে মমতা সেখানে প্রার্থী হলে সেই সামান্য ভোটও কাটতে চায় না কংগ্রেস।

তবে কংগ্রেসের এই ভাবনা নিয়ে জোট শিবিরে টানাপড়েনও আছে। বিধানসভা ভোটে যারা যেখানে প্রার্থী দিয়েছিল, উপনির্বাচনে সেই হিসেবই ধরে রাখার পক্ষপাতী সিপিএম। তবে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেস প্রার্থী দিতে না চাইলে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কারণ, আমাদের বা জোটের কোনও প্রার্থী না থাকলে তৃণমূল-বিরোধী শক্তি হিসেবে সেখানে শুধু বিজেপিই থাকবে। সেটা ভবিষ্যতের জন্য আরও বিপদ কি না, ভাবতে হবে!’’ কংগ্রেস ও সিপিএমের একাংশের মত, বিজেপি এখন আরও দুর্বল হতে পারে এবং সেই জায়গা নেওয়ার লড়াইটাই বাম ও কংগ্রেসকে করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement