কাকদ্বীপের সমাবেশে আব্দুল মান্নান, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। নিজস্ব চিত্র।
কে বড় শত্রু, বিজেপি না তৃণমূল, এই প্রশ্নে বিতর্ক আছে বাম শিবিরে। এ বার সেই প্রশ্ন টেনে ‘জোড়া শক্র’র মোকাবিলার কথা বলল কংগ্রেস। বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়েই বাঘ-কুমিরের উদাহরণ দিয়ে বাংলার সামনে ‘বিপদে’র কথা বললেন বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক আব্দুল মান্নান।
কাকদ্বীপে শুক্রবার যৌথ সভা ছিল জোট-শিবিরের। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের বক্তৃতা বয়কট করে কাকদ্বীপে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু। সেখানেই মান্নান বলেন, ‘‘অনেকে প্রশ্ন করছেন, কে বড় ফ্যাসিস্ট? বিজেপি না তৃণমূল, কে বড় শত্রু? সুন্দরবনের মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বাঘ না কুমির কে বড় বিপদ? তাঁরা বলবেন, দু’টোই বিপদ। বাঘের পিঠে চেপে কুমিরের মোকাবিলা বা কুমিরের ভরসায় বাঘ তাড়ানোর কথা কেউ কি বলবেন?’’ কংগ্রেস নেতার সংযোজন, ‘‘আমরা বলছি, এ বাংলায় দু’টোই বিপদ। বিজেপি এবং তৃণমূল, দু’দলকেই হারাতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।’’ মান্নানের এই কথায় হাততালি দিয়ে সাড়া দিতে দেখা যায় জনতাকে।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবুও এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘বিজেপি রামনবমী করছে, তৃণমূল হনুমান জয়ন্তী পালন করছে। ওরা গরু-সাপ, যা ইচ্ছে পুজো করুক! সেটা জানার বিষয় নয়। কিন্তু এই কারণে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বাড়ছে। রাজ্যে তৃণমূলকে হঠিয়ে বিজেপিকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়ে বাংলার বুকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে তুলতে হবে।’’ তোলাবাজি এবং দুর্নীতির অভিযোগ পরস্পরের বিরুদ্ধে এনে তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা যে ভাবে তরজা চালাচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে সরব হন সুজনবাবু। আর কান্তিবাবুর অভিযোগ, ইউপিএ আমলে কেন্দ্রীয় সরকার সুন্দরবন অঞ্চলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য যে টাকা দিয়েছিল, তার অনেকটা অংশ গত ৯ বছরে ফেরত গিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি।
জোটের সভায় এসেছিল আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রসঙ্গ। বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সমস্ত শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে একই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলার নির্বাচনী ময়দানে নামতে চাই। এখানে লুকোচুরির কোনও ব্যাপার নেই। আইএসএফে বেশির ভাগ মুসসিম মানুষ রয়েছেন ঠিকই কিন্তু তফসিলি আছেন, আদিবাসী আছেন, খ্রিস্টানও আছেন। তাদের সঙ্গেও আমরা বোঝাপড়ায় আসতে চাই।’’ সভার পরে প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, ‘‘সেক্যুলার ফ্রন্টের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ প্রসঙ্গত, বাম ও কংগ্রেসের পরবর্তী জোট-বৈঠক রয়েছে কাল, রবিবার।