ছবি: সংগৃহীত
শাস্ত্রমতে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। তখন থেকেই ঋতু বসন্তের সূচনা ধরা হয়। এ বছর গোল বেঁধেছে সরস্বতীর পুজোর দিনক্ষণ নিয়ে। বুধ নাকি বৃহস্পতিবার? সরস্বতী পুজোর বিধিসম্মত দিন ঠিক কবে, তা নিয়ে আলোচনা, তর্ক চলছে।
বহুল প্রচলিত ক্যালেন্ডার বলছে, সরস্বতী পুজো ২৯ জানুয়ারি, বুধবার। কিন্তু পুরোহিত-পণ্ডিতমহল তা মানতে রাজি নয়। তাঁরা অনুসরণ করেন পঞ্জিকা। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত-সহ প্রায় সব পঞ্জিকার মত, সরস্বতী পুজো ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। অথচ, বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ, এমনকি অনেক বাড়ির পুজোও এ বার বুধবার হচ্ছে। তাতে বেশ ক্ষুব্ধ নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজ। তাঁদের যুক্তি, হিন্দুদের যাবতীয় পুজোপার্বণ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নবদ্বীপের প্রবীণ পুরোহিত সত্যনারায়ণ ব্যাকরণ কাব্যতীর্থ বলেন, “বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় ঘটছে পঞ্চমী তিথির মধ্যে। সুতরাং সরস্বতী পুজো হবে ওই দিনই। বুধবার অনেক বেলায় পঞ্চমী শুরু হচ্ছে। ফলে ওই দিন পুজো বিধেয় নয়।’’ প্রাচ্যবিদ্যা অ্যাকাডেমির প্রধান জয়ন্তকুমার কুশারী-রও একই মত। বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয় বলে বেলুড় মঠেও বৃহস্পতিবারই পুজো হবে।
বঙ্গ বিবুধ জননীসভার পুরোহিত প্রশিক্ষণের ভারপ্রাপ্ত সুশান্ত ভট্টাচার্যের কথায়, “দিনক্ষণের নিরিখে পুজো পার্বণের দুটি ভাগ। সৌরকৃত্য আর চান্দ্রকৃত্য। সৌরকৃত্যে পার্বণের দিন নির্দিষ্ট থাকে। যেমন— পয়লা বৈশাখ, মকর সংক্রান্তি। চান্দ্রকৃত্য বা তিথিকৃত্যে দিনের আগুপিছু হয়। সেখানে তিথিই প্রধান। যে ভাগে দুর্গাপুজো বা সরস্বতী পুজোর মতো পুজো রয়েছে। তাই সরস্বতী পুজোয় পঞ্চমী কখন শুরু হচ্ছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘সূর্যোদয় যখন হচ্ছে তখন কোন তিথি পড়ছে সেটা ধরে বাকি দিনের পুজো পার্বণের হিসাব হয়। বুধবার পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে সকাল ৮.৪৬ মিনিটে। অর্থাৎ বুধবার যখন সূর্যোদয় হয়েছিল তখন চতুর্থী ছিল। ফলে ওই দিন সরস্বতী পুজো বিধেয় নয়।”
পণ্ডিত শুভেন্দুকুমার সিদ্ধান্তের মতেও, “শাস্ত্রে ‘সূর্যোদয়ো বিধ্যা’ নামে একটা কথা রয়েছে। অর্থাৎ কখন সূর্যোদয় হচ্ছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় হচ্ছে পঞ্চমী তিথিতে। ফলে, ওই দিনই সরস্বতী পুজো হওয়া উচিত।”
বৃহস্পতিবার পঞ্চমী ছাড়ছে বেলা ১.২০ মিনিটে। অনেকের ধারণা, এক দিকে বৃহস্পতিবার এক বেলার মধ্যে পুজোর আয়োজন করা সম্ভব হবে না বুঝে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ বুধবারকেই বেছে নিয়েছেন সরস্বতী পুজোর জন্য।