ধন ধান্যে প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য সরকারের তরফে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়। সেখানেই মমতার মন্তব্য, হৃদয়ের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের আরাধনা করা উচিত। ছবি: ফেসবুক।
যে আদর্শে রবীন্দ্রনাথ বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, পথ দেখিয়েছিলেন বিশ্বকে, তা থেকে চ্যুত না হওয়ার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে সেই আদর্শের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার নাম না-করে কটাক্ষ করেছেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে। ধন ধান্যে প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য সরকারের তরফে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়। সেখানেই মমতার মন্তব্য, হৃদয়ের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের আরাধনা করা উচিত।
সোমবার রাতেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যে মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ছিল তাঁর। দিনের শুরুতেই তিনি সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ গিয়েছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সেখানে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হয়। শাহ সেখানে গিয়ে রবীন্দ্রমূর্তিতে মাল্যদানের পাশাপাশি রবীন্দ্র মিউজ়িয়ামও ঘুরে দেখেন। দেখেন রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুকক্ষও। শাহের জোড়াসাঁকো যাওয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়। রাজ্য সরকার আয়োজিত রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও উঠে এল সেই প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের শপথ নেওয়ার পালা। কবিগুরু যে আদর্শ নিয়ে নিয়ে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, যে আদর্শ নিয়ে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিলেন, সেই আদর্শ থেকে আমরা কখনও যেন চ্যুত না হই। আমরা যেন কখনও নিজেদের আত্মঅহঙ্কারী না ভাবি। আমরা যেন না ভাবি, নির্বাচনের প্রয়োজনে পাঁচ টাকায় কাউকে কাউকে কিনতে পারা যায়।’’
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বীরভূমে শাহের জনসভার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। তা পোস্ট করেছিলেন তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-কর্মী। আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। সেই ভিডিয়োতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, রবীন্দ্রনাথের জন্ম বীরভূমে। সেই পবিত্র মাটিকে প্রণাম জানিয়েছিলেন তিনি। মমতার মঙ্গলবারের ভাষণে সেই প্রসঙ্গই ফিরে এল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেন না ভাবি, এমনকি, ভুল করে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান, সে কথাও বলা যায়।’’
এখানেই থামেননি মমতা। কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁর কথায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেন না ভাবি, বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভেঙে ফেলা যায়।’’ ২০১৯ সালের মে মাসে লোকসভা ভোটের প্রচারে রাজ্যে এসেছিলেন শাহ। রোড শো চলছিল। সেই রোড শোকে কেন্দ্র করে ‘সংঘর্ষ’ হয়। এক দল বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দেন। রবীন্দ্রজয়ন্তীতে সেই প্রসঙ্গও তুললেন মুখ্যমন্ত্রী।
শাহের পাশাপাশি নাম না-করে প্রধানমন্ত্রীকেও খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারে এসে রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলেছিলেন মোদী। তাঁর উচ্চারণ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৬তম সাধারণ সভাতেও রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মোদী। সেই উচ্চারণ বিতর্ক নিয়ে মঙ্গলবার মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেন না ভাবি, নির্বাচনের কারণে না জেনে, লিখে নিয়ে এসে অথবা টেলিপ্রম্পটারে লিখে নিয়ে এসে অনেক বড় বড় কথা বলা যায়।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, হৃদয়ের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের আরাধনা করা উচিত। তা হলেই তাঁকে চেনা যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মনে করি, হৃদয়ে যা থাকে, যা স্বরনিবন্ধ থাকে, তা করা উচিত। হৃদয়কে মুক্ত রাখুন। হৃদয়ের মাধ্যমে রবিবন্দনা হোক, হৃদয়ের মাধ্যমে রবিবন্দনা হোক, আরাধনা হোক। তবেই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জানতে পারব।’’
রবীন্দ্রজয়ন্তীতে শাহের রাজ্যে আসা নিয়ে কটাক্ষ করেছে শাসকদল। এই নিয়ে সোমবার নবান্নে শাহকে এক হাত নিয়েছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘উনি বাংলায় আসুন, ওঁকে স্বাগত। আমি এমনও বলছি না, শান্তি ফেরানোর জন্য অশান্তির এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু বাংলায় কিছু হলেই কিন্তু পরের দিন ওঁরা চলে আসেন। তখন ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও তা মানেন না।’’ মঙ্গলবারও একই ভাবে নাম না করে শাহকে ফের খোঁচা দিলেন মমতা। পরামর্শ দিলেন, হৃদয় দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে জানার। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতও গেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ওই অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন প্রমুখ শিল্পীরা।