বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে আরএসএসের ‘বাসা’ আছে, বিধানসভা থেকে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সন্দেশখালিতে এত গোলমালের নেপথ্যে রয়েছে ইডি। তারাই শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে সন্দেশখালিতে ঢুকেছে এবং গোলমাল বাঁধিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে।’’ মমতা জানান, এমনিতেই ওটা অশান্তিপ্রবণ এলাকা। তাঁর কথায়, ‘‘সেখানে মুখে মাস্ক পরে গোলমাল করা হচ্ছে। বহিরাগতরাই সন্দেশখালিতে এত গোলমাল পাকাচ্ছে।’’
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। রেশন ‘দুর্নীতি’ সংক্রান্ত তদন্তের সূত্রেই শাহজাহানের নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু সে দিন শাহজাহানের বাড়িতে ঢুকতেই পারেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা। উল্টে তাঁর অনুগামীদের হাতে ইডি আধিকারিকদের মার খেতে হয়েছিল। ইডি পরে আদালতে জানায়, সে দিন বাড়িতেই ছিলেন শাহজাহান। ভিতর থেকে ফোন করে তিনি বাইরে লোক জড়ো করেছিলেন। তার পর পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেই থেকে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’। তাঁকে খুঁজেই পাচ্ছে না পুলিশ বা ইডি। একাধিক বার তাঁকে সল্টলেকের ইডি দফতরে তলব করা হয়েছে। তিনি প্রতি বারই হাজিরা এড়িয়েছেন। আবার, আদালতে আইনজীবী মারফত আগাম জামিন চেয়েছেন শাহজাহান। জানিয়েছেন, ইডি যদি তাঁকে গ্রেফতার না করে, তবে তিনি হাজিরা দিতে রাজি আছেন।
শাহজাহানকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে সন্দেশখালি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেখানকার গ্রামবাসীরা শাহাজাহান-সহ এলাকার বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এলাকায় অত্যাচারের অভিযোগ জানিয়ে পথে নেমেছেন। তাঁরা শাহজাহানদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। শাহজাহান ছাড়াও ওই তালিকায় আছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবু হাজরা এবং অঞ্চল সভাপতি উত্তম সর্দার প্রমুখ। শাহজাহানদের গ্রেফতারি চেয়ে সন্দেশখালির মহিলারা থানা ঘেরাও করেন। শিবুর পোলট্রি ফার্মে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
শিবু-সহ তৃণমূল শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, এলাকায় উস্কানি দিয়ে ঝামেলা বাধাচ্ছে বিজেপি এবং সিপিএম। শিবুর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ-সহ একাধিক ব্যক্তিকে। এই নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সন্দেশখালিতে। তা নিয়েই বিধানসভায় মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্দেশখালিতে অশান্তির দায় তিনি চাপিয়েছেন ইডি এবং বিজেপির ঘাড়ে।