ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টে হাওড়ায় ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই ক্ষান্ত হননি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। অবিলম্বে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ বন্ধ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একই ভাবে বীরভূমের রামপুরহাটে তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন এবং বগটুই গ্রামে পরের পর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে অন্তত ১০ জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাতেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের বক্তব্য, নদিয়ার হাঁসখালিতে নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও মৃতদেহ লোপাটের মামলাতেও আঙুল উঠছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকার দিকে। ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনেও কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা ভাদু খুন ও বগটুই হত্যাকাণ্ডের জন্য জেলার পুলিশকর্তাদের গাফিলতির দিকে আঙুল তুলতে গিয়েই সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। রামপুরহাটের তৎকালীন এসডিপিও সায়ন আহমেদ এবং নিচু তলার কিছুঅফিসারকে সম্প্রতি সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করে তাঁদের লিখিত বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ওই সূত্রের বক্তব্য, ২১ মার্চ ভাদু খুন হন এবং সেই হত্যাকাণ্ডের জেরেই বগটুই গ্রামে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তদন্তকারীদের কথায়, উপপ্রধান খুন না-হলে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটত না। আর ভাদু খুন হন তাঁর সুরক্ষায় ফাঁকফোকর থেকে যাওয়ার পরিণামে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন পুলিশ সুপারকে নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন ভাদু। তার পরে দু’জন পুলিশ সুপার বদলি হন। তৃতীয় পুলিশ সুপার এলেও ভাদুর নিরাপত্তার আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা হয়নি। ২০২০ সালে ভাদুরচিঠির পরে অগস্টে তাঁর সুরক্ষায় দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশের টহলদার ভ্যানের ব্যবস্থা করে পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু তাতে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারেনননি ভাদু ও তাঁর পরিবার। তদন্তকারীরা ভাদুর স্ত্রী এবং অন্য আত্মীয়দের বয়ান নিয়েছেন। খুনের আশঙ্কায় ভাদু বগটুই গ্রামে নিজের বাড়ির দোতলা ও তেতলার যে-দু’টি ঘরে থাকতেন, সেই দু’টি ঘরের সমস্ত জানলা খুলে ফেলে ইট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাঁর স্বজনদের বক্তব্য, রাতে বা দিনে কেউ জানলা দিয়ে বোমা-গুলি ছুড়তে পারে বলে ভয় ছিল ভাদুর। সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তায় ভরসা না-থাকায় দলীয় কর্মীদের নিয়ে সব সময় ঘোরাফেরা করতেন তিনি।
তদন্তকারীদের অভিযোগ, ২১ মার্চ ভাদু যখন খুন হন, তাঁর নিরাপত্তায় তখন কোনও সিভিক ভলান্টিয়ারই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আশেপাশে ছিল না কোনও টহলদার ভ্যানও। খুনের পরে বগটুইয়ে পরপর বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। তখন ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার তখন থানায় খবর দেননি বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
তৎকালীন এসডিপিও সায়ন আহমেদ ও নিচু তলার পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসার ভিত্তিতে তদন্তকারীরা জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে দমকলে খবর গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের খবর পেয়ে এসডিপিও বাহিনী নিয়ে বগটুইয়ে পৌঁছেছিলেন বলে দাবি করেছেন। ওই পুলিশ আধিকারিক জানান, বড়কর্তাদের নির্দেশে তিনি রামপুরহাটের একটি অতিথিশালায় ফিরে যান। সেখানে জেলা পুলিশের বড়কর্তার এক বৈঠকে এসডিপিও এবং নিচু তলার ওই পুলিশকর্মীদের তলব করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
সিবিআই তদন্তকারীদের প্রশ্ন, বগটুই গ্রাম থেকে ঢিলছোড়া দূরের অতিথিশালায় গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করে পুলিশকর্তারা ফিরে গেলেন, অথচএকের পর এক বাড়িতে আগুন লাগানো হচ্ছে জেনেও তাঁরা ঘটনাস্থলে গেলেন না কেন?
তদন্তকারীদের দাবি, বগটুই কাণ্ডে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে তদন্তে উঠে এসেছে, কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্দেশে পুলিশকর্তা ওসিভিক ভলান্টিয়ারেরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সিবিআইয়ের একপদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় ধৃতদের এবং নিচু তলার পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোবাইলের ‘ডেটাবেস’-এর তথ্য যাচাই করে পাওয়া সূত্রের ভিত্তিতে জেলার পুলিশকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে। সে-দিনেরপুলিশি নিষ্ক্রিয়তার পিছনে কোনও প্রভাবশালী যোগ রয়েছে কি না, তা যাচাই করে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।