প্রতীকী চিত্র।
বিধিসম্মত হুঁশিয়ারি আছে। প্রচারও চলে, আলোচনাসভা হয়। ধরা পড়লে গ্রহণ করা হয় আইনি ব্যবস্থা। এত সব সত্ত্বেও জঙ্গলের আড়ালে-আবডালে গাঁজা এবং নির্জন প্রত্যন্ত এলাকায় পোস্ত চাষ চলছেই। সেই চোরাগোপ্তা গাঁজা ও পোস্ত চাষ ঠেকাতে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সিআইডি। এবং তাতে সাফল্যও মিলছে বলে গোয়েন্দাকর্তাদের দাবি।
পুলিশি সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে ড্রোন মারফত নজরদারি চালিয়ে কোচবিহারের অন্তত দু’জায়গায় নিষিদ্ধ গাঁজা চাষের সন্ধান পায় সিআইডি-র নার্কোটিক্স শাখা। তার মধ্যে তুফানগঞ্জে সাত একর জমির গাঁজা চাষ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দিনহাটায় ২০ একর জমিতে গাঁজা চাষের খোঁজ মিলেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দিনহাটার ওই চাষের খবর জেলা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তা নষ্ট করার কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। ড্রোন ছাড়াও উপগ্রহের পাঠানো ছবি সংগ্রহ করে রাজ্যে মাদক চাষে নজর রাখছে সিআইডি। এই কাজে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)-র সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া জেলাতেও মাদক চাষের বিরুদ্ধে আলাদা ভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। সিআইডি সূত্রের খবর, কোথাও মাদক চাষের ছবি ধরা পড়লে দ্রুত সেই জেলার পুলিশকে তা জানানো হচ্ছে। তার পরে আবগারি দফতর ও পুলিশ একযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
লাইসেন্স ছাড়া গাঁজা ও পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ। অভিযোগ, কোচবিহার, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহের মতো জেলায় এখন লুকিয়ে গাঁজা ও পোস্ত চাষ হচ্ছে। মূলত নভেম্বরের গোড়ায় ওই চাষ শুরু হয়। সিআইডি সূত্রের খবর, ওই চাষ বন্ধের জন্য মাইকে প্রচার থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। তার পরেও মাদক চাষ চলতে থাকায় ড্রোনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এক-এক বার ড্রোন পাঠিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। এই ভাবেই কোচবিহারের দু’টি জায়গায় গাঁজা চাষের হদিস পাওয়া গিয়েছে।
এক পুলিশকর্তা জানান, তাঁরা এ রাজ্যে মাদক চাষকে শূন্যে নামিয়ে আনতে চান। তার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত মার্চেও ড্রোন উড়িয়ে বাঁকুড়ার মেজিয়ায় পোস্ত চাষের সন্ধান মিলেছিল। সেই খেত নষ্ট করার পরে এ-পর্যন্ত পোস্ত চাষের সন্ধান মেলেনি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসে পোস্ত বা গাঁজা চাষ হয়ে থাকে। জঙ্গলের আড়ালে চলে গাঁজা আর সীমানাবর্তী নির্জন এলাকায় পোস্ত চাষ হয়। পোস্ত গাছের ফল আফিমের উৎস, তাই যত্রতত্র পোস্ত চাষ করা যায় না। সিআইডি জানিয়েছে, ড্রোনের মাধ্যমে পোস্তের সাদা সাদা ফুল খুঁজে পাওয়া যায়।
গোয়েন্দাদের দাবি, এ রাজ্যে মাদক চাষ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মণিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা এবং ওড়িশা থেকে মাদক আনছে কারবারিরা। গত দু’সপ্তাহে ওড়িশা থেকে এ রাজ্যে মাদক নিয়ে আসার দু’টি ঘটনা সামনে এসেছে। সিআইডি-র দল আট জনকে গ্রেফতার এবং প্রায় সাড়ে পাঁচশো কিলোগ্রাম গাঁজা আটক করেছে।