৩১ শতাংশ হারেই মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দিতে হবে, এই দাবিতে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে জয় পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে রাজ্যকে। অর্থাৎ স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)-এর রায়ই বহাল রাখল আদালত। ফলে রাজ্যকে এ বার সরকারি কর্মীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দিতে হবে।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে স্যাটে ২০১৬ সালে মামলা করে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাঝে ডিএ বাড়ালেও এখনও কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের কর্মীরা ৩১ শতাংশ কম পান।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্যাটে শুনানির সময় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের আইনসিদ্ধ অধিকার নয়। সরকার ইচ্ছে করলে দিতে পারে, না-ও দিতে পারে। অর্থাৎ, ডিএ দেওয়া বা না দেওয়া সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সেই বক্তব্যকেই মান্যতা দেয় স্যাট। স্যাটের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়। তখন হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের রায়কে খারিজ করে জানিয়ে দেয়, মহার্ঘ ভাতা সরকারের দান নয়, কর্মীদের আইনি অধিকার। ফলে আদালতে বড়সড় ধাক্কা খায় রাজ্য এবং স্যাট। একই সঙ্গে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য মামলাটি স্যাটের কাছেই পাঠায় আদালত।
মামলার দু’টি বিষয় ছিল। প্রথমত, রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন কি না? দ্বিতীয়ত, অন্য রাজ্যে কর্মরত এ রাজ্যের কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেলে, এ রাজ্যের সরকারি কর্মীরা কেন তা পাবেন না। কেন এই বৈষম্য? সঙ্গে হাই কোর্ট পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, দু’মাসের মধ্যে শুনানি শেষ করে এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে স্যাটকে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এর পরই স্যাটের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের বেঞ্চ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, ছ’মাসের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে ফের আদালতে যায় রাজ্য। তত দিনে ছ’মাস পেরিয়ে যাওয়ায় রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে ফের বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দেয় আদালত। যদিও তার আগেই স্যাটের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ এ বছরের ২৯ এপ্রিল এই মামলার শুনানি শেষ করে। তার পরই ২০ মে এই মামলার রায় ঘোষণা করল আদালত।
পশ্চিমবঙ্গে যেখানে সরকারি কর্মীরা ৩ শতাংশ হারে ডিএ পান, সেখানে বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকারি কর্মীরা কত শতাংশ ডিএ পান তারও একটা তুলনামূলক নমুনা দেওয়া হল। মূলত চারটি রাজ্যের কর্মীর ডিএ কত পান তা দেখে নেওয়া যাক। গুজরাতে বিজেপি শাসিত সরকার। সেখানে ২০২১-এর জুলাই অনুযায়ী ২৮ শতাংশ ডিএ পান কর্মীরা। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ৩৪ শতাংশ (১ জানুয়ারি, ২০২২), বাম শাসিত কেরলে ৩৬ শতাংশ (২০২০, জুলাই) এবং জেডিইউ-বিজেপি জোটের বিহারে ২৮ শতাংশ।