ফাইল চিত্র।
বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরেও রাজ্য জুড়ে জমি সংক্রান্ত অভিযোগের স্রোত অব্যাহত। ভূমি দফতরের কিছু অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও জমি পরিষেবা নিয়ে জেলায় জেলায় ভূমি বিভাগের এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারের অনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ আসছে প্রায় নিত্যদিন। বিষয়টি এমনই গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। ব্লক থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত ভূমি দফতরের কার্যালয়গুলিতে পরিষেবা নিশ্চিত করতে নজরদার কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই কাজে দায়িত্ব বাড়ানো হচ্ছে পুলিশের। সামগ্রিক নজরদারির ভার ন্যস্ত হয়েছে জেলাশাসকের উপরে। জেলা-ভিত্তিক ভূমি দফতরগুলিতে চুক্তিতে কর্মী নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্লক স্তরে ভূমি দফতরের পরিষেবা নজরদার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককে (বিডিও)। ব্লক স্তরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসার হবেন কমিটির আহ্বায়ক। সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট থানার আইসি অথবা ওসি। সপ্তাহে এক দিন সমন্বয় বৈঠক করবেন কমিটির সদস্যেরা। ব্লক স্তরে বকেয়া থাকা জমির মিউটেশন-কনভারশনের নিষ্পত্তি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এবং ভূমি দফতরে জমা পড়া অভিযোগের মীমাংসা, পাট্টা বণ্টন, আদিবাসীদের জমির দখল ঠেকানো, স্থানীয় ভূমি দফতরের অফিস ঘিরে অনৈতিক কার্যকলাপ, বালি-পাথর-মাটি কাটা, অবৈধ ভাবে জলাজমির চরিত্র বদলানোর মতো ঘটনার উপরে নজর রাখবে ওই কমিটি।
মুখ্যসচিবের নির্দেশ, মহকুমা স্তরেও অনুরূপ কমিটি গড়া হবে এসডিও, এসডিপিও এবং সংশ্লিষ্ট ভূমিকর্তাদের নিয়ে। সেই কমিটি মাসে এক বার উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক করবে। গোটা পদ্ধতির উপরে নজরদারি চলবে জেলাশাসকের নেতৃত্বে।
সরকারের সিদ্ধান্ত, জেলার ভূমি কার্যালয়গুলিতে ৮৪৫ জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। সব চেয়ে বেশি নিয়োগ হবে বিভিন্ন বিএলএলআরও কার্যালয়ে।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যে শূন্য পদের সংখ্যা প্রচুর। তার অভাব অনুভব করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। এক জনের উপরে অনেকের কাজ চেপে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের উচিত শূন্য নিয়মিত পদগুলি পূরণ করা। তাতে সরকারের কাজের সুবিধা হবে এবং কিছুটা সমাধান হবে বেকার সমস্যার। তবে শুধু চুক্তিভিত্তিক কর্মী দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।’’
কেন এই পদক্ষেপ?
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে জমি সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পাচ্ছে রাজ্য সরকার। বিগত কয়েকটি প্রশাসনিক বৈঠকে এই নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকাশ্যে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের সতর্ক করে দিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠকেও একাধিক অভিযোগ শুনতে হয়েছিল মমতাকে। জমির চরিত্র বদল করতে গিয়ে মানুষের হেনস্থার ঘটনাও তাঁর নজর এড়ায়নি। তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের জমি সাধারণ শ্রেণিভু্ক্ত হওয়ার ঘটনাও প্রকাশ্যে চলে আসে।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, জমি সংক্রান্ত পরিষেবায় ত্রুটি থাকলে মানুষের রাগ-ক্ষোভ তৈরি হয় সরকারের উপরে। পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। এই অবস্থায় জমি সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে থাকলে শাসক দলের পক্ষে সুখকর পরিস্থিতি তৈরি করবে না। তাই গোটা বিষয়টির উপরে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের উপরে।