মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কাজে গাফিলতি দেখলে রাজ্য সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্ন থেকে রাজ্য প্রশাসনে কর্মরত জেলার আধিকারিকদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে কাজে গাফিলতি করলে যেমন কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগ করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন, তেমনই আবার নিচুতলায় পঞ্চায়েত দুর্নীতির ঘটনা রুখতেও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারি কাজে গাফিলতির প্রশ্ন তুলে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে তিনি কেন্দ্রীয় আইনের ৫৬ জে ধারা প্রয়োগ করে সরকারি আধিকারিক ও কর্মচারীদের ‘বাধ্যতামূলক অবসরে’ পাঠাতেও পিছপা হবেন না। প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনের ব্যবহার করে ৯৬ জন শীর্ষ আধিকারিকের কর্মজীবনে ছেদ টেনে দিয়েছে। সেই আইন প্রয়োগের কথা বলেই মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে সরকারি আধিকারিকদের নিজেদের দায়িত্ব প্রসঙ্গে সচেতন করেছেন।
পাশাপাশি, পঞ্চায়েতের নিচুতলার দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আধিকারিকদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন মমতা। বৈঠক সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের নিচুস্তরে কোনও দুর্নীতি হলে, কেন তার দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে? সেই প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী নিচুতলার দুর্নীতি রুখতে জেলা প্রশাসনকে সঠিক ভাবে নজরদারি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছেন। তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ৫৬ জে ধারা প্রয়োগের মন্তব্য প্রসঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সরকারি কর্মচারীরা অসহযোগিতা করছেন, সরকারের তথ্য বাইরে পাচার করছেন। ৫৬ জে ধারা প্রয়োগ করে নাকি তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন। এই ৫৬ জে ধারা আইনটি আইএএস ও আইপিএসদের জন্য তৈরি করা একটি কেন্দ্রীয় আইন। এখানে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতো কোনও প্রবিধান নেই।’’ এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী স্বৈরাচারীর মতো কথা বললে হবে না। প্রত্যেক কাজের একটা পদ্ধতি আছে। শোকজের পর অনেক কিছু পদ্ধতি আছে। উনি এর আগেও বলেছিলেন, যাঁরা ধর্মঘট করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। কিছুই করতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর বাহিনী যে ভাবে বাংলাকে লুট করছে, তাতে মানুষ বলছে এই সরকারকে বরখাস্ত করতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ২০ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সেই কর্মসূচিতে বুথ স্তরে গিয়ে সরকারি আধিকারিকরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন। সেই কারণেই জেলার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। আর সেই সুযোগে প্রশাসনের সর্বস্তরে যাতে কড়া বার্তা যায়, সে বিষয়ে নিজে কড়া নীতির প্রয়োগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন, দরকার পড়লে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাতিল করে দিতে হবে। কিন্তু কর্মসূচি পালনে কোনও ফাঁকি তিনি মেনে নেবেন না।