(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আগামী সোমবার, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, ওইদিনই কলকাতায় ‘সংহতি মিছিল’ করা হবে। তারই পাশাপাশি রামমন্দির উদ্বোধনের দিন বিকালে উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো এলাকায় একটি মিছিল করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও ওই মিছিল ‘অরাজনৈতিক’ মঞ্চ থেকে করা হবে বলেই জানিয়েছে বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশ ওই মিছিলের অনুমতি দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপি নেতৃত্ব। সে কারণে আগেভাগেই আইনি পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা।
এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে গিয়ে প্রশাসনের অনুমতি পাননি শুভেন্দু। বহু ক্ষেত্রেই তাঁকে আদালতে গিয়ে নিজের মিছিল এবং সভার জন্য অনুমতি আদায় করে আনতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। তাই বিরোধী দলনেতার মিছিল নিয়ে আগাম আইনি কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। যদিও প্রকাশ্যে ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ তারা। উত্তর কলকাতা বিজেপি জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ বরং বলছেন, ‘‘ওইদিন যে মিছিলে বিরোধী দলনেতা হাঁটবেন, তা একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল। বিজেপি সেই মিছিলের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।"
শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর থেকে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা তাঁর মিছিলের কর্মসূচি এই প্রথম। তাই বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও মুখ্যমন্ত্রীর সংহতি যাত্রার কথা উল্লেখ করেই শুভেন্দুকে মিছিলের অনুমতি না দেওয়া হতে পারে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার আগেই নন্দীগ্রামের বিধায়কের কর্মসূচি স্থির হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী দলের সব নেতাকে নিজ নিজ রাজ্যে এবং এলাকায় থেকে রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা দিবস উদযাপন করতে বলেছেন। সেই নির্দেশমতোই নিজের কর্মসূচি সাজিয়েছেন শুভেন্দু। ওইদিন সকাল থেকে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে রামমন্দির উদ্বোধনের দিনটি পালন করবেন তিনি। পরে বিকেলের দিকে কলকাতার জোড়াসাঁকো এলাকার রামমন্দিরে পুজো দেবেন তিনি। তারপর ধর্মীয় একটি সংগঠনের মিছিলে অংশ নিয়ে হাঁটবেন উত্তর কলকাতার রাস্তায়।
বিজেপি নেতৃত্বের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি মূলত দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রিক হলেও গোটা কলকাতায় তার প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে শুভেন্দুর মিছিলের অনুমতি না দিতে পারে কলকাতা পুলিশ। নিজের মিছিলের কর্মসূচি ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ব্লকে ব্লকে সংহতি মিছিলের আয়োজন করতে বলেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। তাই হাজরা থেকে পার্কসার্কাস পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের সংহতি মিছিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলার কথা বলে বিরোধী দলনেতার মিছিলের অনুমতি না দেওয়া হতে পারে। তাই সবদিক বিচার-বিবেচনা করে আইনি পরামর্শ নেওয়া শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। ওইদিনই যাতে বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা মিছিলে হাঁটতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনে আদালতে যেতে প্রস্তুতিও শুরু করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।