মিনিট দশেক পরিদর্শনের পর নিজের দফতর ১৪ তলায় চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সচিবালয়ের চিত্রে যে খুব বদল হয়নি ফের তা মালুম হল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। বুধবার আচমকাই নবান্নের একটি দফতরে উপস্থিত হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়ে জানতে পারলেন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কর্মীদের উপস্থিতির হার ২৫ শতাংশ। এই ঘটনায় অনেকেরই মনে পড়েছে বাম জমানার কথা। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকেও আক্ষেপ করে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘কাজ করতে বলব কাকে, চেয়ার-টেবলকে?’’
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে আসা মাত্রই নিরাপত্তারক্ষীরা বুঝতে পারেন, নিজের দফতরে ১৪ তলায় না গিয়ে অন্য কোনও দফতর পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। নিরাপত্তারক্ষীরা নির্দেশ পান যে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যেতে হবে চতুর্থ তলায়। যেখানে স্বরাষ্ট্র দফতরের পাশাপাশি রয়েছে, পার্বত্য বিষয়কও দফতরও। সূত্রের খবর, সেখানে গিয়েই মমতা জানতে পারেন, বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাজিরা মাত্র ২৫ শতাংশ।
দিনের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্র দফতরে হাজির হওয়ায় খানিকটা অবাকই হয়ে যান উপস্থিত কর্মীরা। আচমকা মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের দফতরে দেখে নিজের নিজের টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন। দফতর ঘুরে ঘুরে কর্মীদের উপস্থিতির ও কাজের পরিবেশও খতিয়ে দেখেন তিনি। কয়েক জন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে কাজ নিয়ে তাঁদের মতামতও জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে দুই দফতরের কর্মীদের অনুপস্থিতি। দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, বুধবার সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মী হাজির হয়েছেন। মিনিট দশেক পরিদর্শনের পর নিজের দফতর ১৪ তলায় চলে যান মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৩ সালে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর মহাকরণ থেকে নবান্নে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী আচমকা কখনও স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতর পরিদর্শনে যাননি। স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর আচমকা উপস্থিত হওয়ার খবর নবান্নের অন্য দফতরগুলিতেও পৌঁছে যায়। তাই সেখানেও কর্মীদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়।
গত ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘটের আগেই রাজ্য সরকারের তরফে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের কড়া বার্তা দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসন। জানানো হয়েছিল উপযুক্ত কারণ ছাড়া গরহাজির থাকলে এক দিনের বেতন, এমনকি চাকরি জীবন থেকে একদিন বাদ চলে যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে ‘ব্রেক ইন সার্ভিসের’ কথাও উল্লেখ করেছিল অর্থ দফতর। সেই অনুযায়ী শুরু হচ্ছে শোকজ়ের প্রক্রিয়া সোমবার। ১৩ তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন থেকে অর্থ দফতর সরকারি কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণ তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত কর্মচারীদের লিখিত ভাবে জানাতে হবে, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে না। সন্তোষজনক উত্তর না এলে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে ওই নোটিসে। আর তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী এমন আচমকা পরিদর্শনে সঙ্গে কঠোর পদক্ষেপের গন্ধ পাচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ।