বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে ‘বিস্ফোরক’ মমতা। ছবি: সংগৃহীত।
সিঙ্গুর থেকে টাটাদের ন্যানো প্রকল্প সরে যাওয়ার দায় তাঁর নয়। এর জন্য দায়ী তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। বুধবার শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে এমনই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। ওরা জোর করে জমি নিতে গিয়েছিল। আমরা ফিরিয়েছি।’’
ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য সিঙ্গুরের চাষের জমি টাটাদের দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই জমি রক্ষার লড়াইতে বাম সরকারের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাষের জমিতে কিছুতেই শিল্প করা যাবে না, তৃণমূলের এই নাছোড়বান্দা দাবিতে শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুরের মাটি ছাড়তে বাধ্য হয় টাটা গোষ্ঠী। টানা ২৬ দিন অনশন করেছিলেন মমতা।
বস্তুত, সিঙ্গুর আন্দোলনে ভর করেই ২০১১ সালে রাজ্যের মসনদে বসার পথ প্রশস্ত করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী, এমটাই মনে করা হয়। মমতার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, তৃণমূল সরকারের প্রথম কাজই ছিল সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দিতে আইন তৈরি করা। তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রথম সিদ্ধান্তও ছিল এটাই। তবে মমতা জানালেন, সিঙ্গুর থেকে টাটার ন্যানো কারখানা গুজরাতের সানন্দে সরে যাওয়ার দায় পূর্বতন সরকারের।
বুধবার মমতার গলায় ঘুরেফিরে আসে শিল্প-প্রসঙ্গ। তিনি জানান, শিল্পের প্রয়োজনে কোথাও কখনও জোর করে জমি অধিগ্রহণ করেননি তাঁরা। উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ট্যুরিজম এমন ভাবে করুন যাতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান পায় বাংলার পর্যটন শিল্প। কোনও ভাগাভাগি এবং প্ররোচনায় পা দেবেন না। এক সঙ্গে থাকুন। কোনও ভঙ্গ-টঙ্গ নয়। আমরা চাই সঙ্গ।’’ আবার শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ এবং চাকরির দাবিতে চলা আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘ঢেলে কাজ হচ্ছে রাজ্যে। ঢেলে কর্মসংস্থান হোক। আমরা কারও চাকরি খাব না। চাকরি দেব।’’
অন্য দিকে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গুর-মন্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘উনি মিথ্যাচারে ডি.লিট।’’ সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্যও তেমনই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেন, ‘‘উনি শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী রাজনীতিক। কখনও তথ্যভিত্তিক সত্যি কথা বলেন না।’’