CV Ananda Bose

রাজ্যপাল বোস নিয়ে বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের ভাবনা কী? ‘টানাপড়েন’ রিপোর্ট শাহের মন্ত্রকে

অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পশ্চিমবঙ্গ শাখা থেকে রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। রিপোর্টে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের প্রকাশ্যে ও গোপনে বলা মন্তব্যগুলি বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩৩
Share:

রাজ্যপালের দিল্লি সফরকে বর্ণনা করা হতে থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘তলব’ হিসেবে। ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিয়ে রাজ্য বিজেপির ভাবনা সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। প্রত্যাশিত ভাবেই রিপোর্টটি ‘গোপন’। দিল্লির খবর, অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পশ্চিমবঙ্গ শাখা থেকে রিপোর্টটি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। রিপোর্টে রাজ্যপাল প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রকাশ্যে ও গোপনে বলা মন্তব্যগুলি বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে।

Advertisement

গত বছর নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আনন্দ বোস। এই প্রাক্তন আমলা দায়িত্ব নেওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়ের জমানার মতো রাজভবনের দ্বার তাঁদের জন্য থাকবে অবারিত। তাঁদের অভিযোগের কথা শুনবেন এবং নবান্নকে ‘ব্যতিব্যস্ত’ রাখবেন নতুন রাজ্যপাল। কিন্তু এখনও তা পর্যন্ত হয়নি। বস্তুত, রাজ্যপালকে নিয়ে কখনও সরাসরি আবার কখনও ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ চাপা রাখছেন না বাংলার বিজেপি নেতাদের একটি অংশ। স্বপন দাশগুপ্ত যেমন প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশিই বিজেপি নেতাদের একটি অংশ আক্ষেপ করছেন, বোস ‘ধনখড়ের মতো’ নন। কিছু নেতা নতুন রাজ্যপালকে নিয়ে তাঁদের ক্ষোভের কথা দিল্লির রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে।

রাজ্যের বিজেপি নেতাদের চটিয়েছে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্যপাল বোসের ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠান। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যাননি। যাননি রাজ্য বিজেপির অন্য কোনও নেতাও। বস্তুত, ওই অনুষ্ঠানের পরেই রাতে রাজ্যপাল দিল্লি যান। এবং সেই সফরকে বর্ণনা করা হতে থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘তলব’ হিসেবে। বাস্তবে বিষয়টি তা ছিল না। রাজ্যপালের সফর ছিল পূর্বনির্ধারিত। পর দিন নয়াদিল্লির একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই সফর সেরে তিনি রাজ্যে ফিরে আসেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা ছিল না। তা হয়ওনি।

Advertisement

কিন্তু বাংলার বিজেপি নেতারা তাতে দমে যাননি। তাঁরা রাজ্যপালকে নিয়ে তাঁদের ‘বিরাগ’-এর কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়মিত জানাচ্ছেন বলেই একটি সূত্রের দাবি। ওই সূত্রেরই দাবি, রাজ্যপাল এবং রাজ্য বিজেপি নেতাদের ‘টানাপড়েন’ সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর সত্যতা কেউই স্বীকার করছেন না।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো রিপোর্ট গুরুত্ব পেয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় বিজেপির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতামত। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির ‘ইন্টেলেকচুয়াল সেল’ রাজ্যপালের কাছে সময় চেয়েছিল শিক্ষা দফতরের ‘দুর্নীতি’ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। একটি অভিযোগপত্রও রাজ্যপালের কাছে জমা দিতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু রাজভবন থেকে তাদের ‘সময়’ দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। এই বিষয়টিও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্যপালের দ্বারস্থ হতে চেয়েও হতে পারেননি, এমন আরও কিছু ঘটনার কথা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ধনখড় জমানায় যেভাবে বিরোধী দলনেতা ঘনঘন রাজভবনে যেতেন, তা যে এখন ‘ইতিহাস’, তা-ও জানানো হয়েছে রিপোর্টে। এক কথায়, রাজভবন এবং রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান দূরত্ব’-এর কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ‘ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস’ কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যে কেন্দ্রীয় দলটি পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল, তার সদস্য ছিলেন বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোস। সেই সূত্রেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের আশা ছিল, নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ধনখড়ের মতোই নবান্নের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাবেন তিনি। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ তার উল্টো পথে হাঁটছে। রাজ্যপালের মুখে শোনা গিয়েছে শাসক তৃণমূলের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। সেই বিষয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের ক্ষোভের কথাও শাহের দফতরকে পাঠানো রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই রিপোর্টকে কতটা আমল দেন বা আদৌ আমল দেন কি না। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যপাল বোসকে সরিয়ে কোনও ‘কড়া’ মানসিকতার রাজ্যপালকে আনা হোক কলকাতার রাজভবনে। সূত্রের খবর, কিছু নামও তাঁরা ভেবে ফেলেছেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement