RG Kar Case Verdict

সিসি ফুটেজ, ইয়ারফোন, রক্তের দাগ...! সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জশিটে ১১ দফা ‘প্রমাণ’ দিয়েছিল সিবিআই

আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে শনিবার দোষী সাব্যস্ত করল শিয়ালদহ আদালত। যদিও সাজা ঘোষণা হয়নি। বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, সাজা ঘোষণা হবে সোমবার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৩
Share:

আরজি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়। —ফাইল চিত্র।

আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে শনিবার দোষী সাব্যস্ত করল শিয়ালদহ আদালত। বিচারক অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সিবিআই আদালতে যে নথি-তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রমাণিত, সঞ্জয় অপরাধী। তাই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে চার্জশিট দিয়ে জানিয়েছিল, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে তারা মোট ১১টি প্রমাণ পেয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে সেই সব প্রমাণ মিলেছে।

Advertisement

সিবিআই চার্জশিটে যে ১১টি প্রমাণ দিয়েছিল, তা হল—

১. সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট ভোরে (ঘটনার দিন) আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় গিয়েছিলেন সঞ্জয়। সেটাই ছিল মূল ঘটনাস্থল।

Advertisement

২. সঞ্জয় যে ওই রাতে আরজি কর হাসপাতালেই ছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে।

৩. ময়নাতদন্তের সময় মৃতার দেহ থেকে সঞ্জয়ের ডিএনএ মিলেছে।

৪. সঞ্জয়ের যে প্যান্ট এবং জুতো পুলিশ উদ্ধার করেছিল, তা থেকে মৃতার রক্তের দাগ মিলেছে।

৫. ঘটনাস্থল থেকে যে ছোট ছোট চুল পাওয়া গিয়েছিল, তা সঞ্জয়ের চুলের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

৬. ঘটনাস্থল থেকে যে ব্লুটুথ ইয়ারফোন উদ্ধার হয়েছিল, তা সঞ্জয়ের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ফোনের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ করা জরুরি, ঘটনার রাতে সঞ্জয়কে যখন ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল, তখন তাঁর গলায় ব্লুটুথ ইয়ারফোন জড়ানো ছিল। কিন্তু তিনি যখন ফিরছিলেন ঘটনাস্থল থেকে, তখন সেই ব্লুটুথ ইয়ারফোন তাঁর গলায় ছিল না। সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই তা জানা গিয়েছে বলে দাবি করেছিল সিবিআই।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

৭. সঞ্জয়ের শরীর থেকে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছিল, দেখা গিয়েছে, সঞ্জয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষার ২৪ থেকে ৪৮ ‌ঘণ্টা আগে সেই ক্ষত তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ, হিসাব মতো ৮ অগস্ট থেকে ৯ অগস্টের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল সেই ক্ষত। ঘটনাচক্রে, মহিলা চিকিৎসকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাও ওই সময়েই ঘটেছিল।

৮. সঞ্জয়ের শরীরে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, সেগুলি নির্যাতিতার প্রতিরোধের ফলেই তৈরি হয়েছিল।

৯. সঞ্জয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা থেকে এ রকম কোনও প্রমাণ মেলেনি যে, তিনি সঙ্গমে অক্ষম।

১০. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতার অন্তর্বাসের সেলাই যে ভাবে ছিঁড়ে গিয়েছে, তা থেকে বোঝা গিয়েছে যে, সেটি জোরজবরদস্তি খোলা হয়েছে।

১১. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতা যে কুর্তি পরেছিলেন, কোমরের কাছে সেই কুর্তির দু’পাশটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তা টানাহেঁচড়ার কারণেই হয়েছে।

যদিও শনিবার সঞ্জয় আদালতে দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। বিচারককে তিনি জানান, তিনি নির্দোষ। তবে বিচারক তাঁর কথা শোনেননি। তিনি বলেন, ‘‘সব সাক্ষীকে জেরা করে এবং সিবিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে যা মনে হচ্ছে, তাতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শাস্তি আপনাকে পেতে হবে।’’

গত ৯ অগস্ট আরজি করের সেমিনার হল থেকে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পরের দিনই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার পায় সিবিআই। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে চার্জশিট তাঁর একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবেই বর্ণনা করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দু’মাসের বেশি সময় ধরে বিচারপ্রক্রিয়ায় চলার পর শনিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক সঞ্জয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি ৯ অগস্ট ভোরের দিকে আরজি কর হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। সেখানে এ দিক-ও দিক ঘোরাঘুরি করার পর এক মহিলা চিকিৎসককে আক্রমণ করেন। তাঁর মুখ চেপে ধরেন। গলা চেপে ধরেন। তাতে উনি মারা যান। আপনি যৌন হেনস্থাও করেন। যে ভাবে আপনি গলা চেপে ধরে হত্যা করেছেন, তাতে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।’’

বিচারক রায় দেওয়ার পরেই আদালতে হাতজোড় করে ‘স্যর’ ‘স্যর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন সঞ্জয়। বলেন, ‘‘আপনি তো দোষী সাব্যস্ত করে দিলেন। আমি গরিব। আমি এই কাজ করিনি। যারা করেছে, তাদের কেন ছাড়া হচ্ছে?’’ তার পর আদালত থেকে একপ্রকার জোর করেই বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে। সোমবার আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম, পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই নিয়ম মেনেই আরজি কর পর্বের প্রথম দিন থেকে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম বা ছবি প্রকাশ করেনি। শনিবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় আমরা তাঁর নাম এবং ছবি প্রকাশ করা শুরু করছি।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement