অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই দল।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরাকে সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব সংক্ষিপ্তই রইল। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের ইঙ্গিত, এটা শুরু মাত্র, অদূর ভবিষ্যতেই আবার দেখা হতে পারে দু’পক্ষের।
মঙ্গলবার অভিষেকের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে কয়লাপাচার-মামলায় তাঁর স্ত্রী-র সঙ্গে কথা বলেন গোয়ন্দারা। প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়।বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয় রুজিরাকে। কিন্তু সব প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলে সূত্রের খবর। জেরার সময় উপস্থিত ছিলেন রুজিরার আইনজীবীরাও। তাঁদের সামনেই ‘সন্দেহজনক এবং সঙ্গতিহীন’ হিসাবপত্রের নথির প্রতিলিপি দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয় রুজিরাকে।
সোমবার রুজিরার বোন মেনকা গম্ভীরকেও জেরা করা হয়েছিল বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন নিয়ে। মঙ্গলবার অভিষেকের বাসভবন ‘শান্তিনিকেতন’ থেকে নিজাম প্যালেসেরসিবিআই দফতরে ফিরে দুই বোনের বয়ান মিলিয়ে দেখার পর্ব শুরু করে দিয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রয়োজনে ফের তাঁদের জেরা করা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রে খবর। তদন্তে সহযোগিতা না করলে আইনি পথও খোলা রাখার কথা ভেবে রাখছেন গোয়েন্দারা। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, সিবিআই-কে সব রকমের সহযোগিতা করা হয়েছে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা পাচার-কাণ্ডের তদন্তে নেমে ব্যাঙ্কক এবং লন্ডনের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের বিষয় জানতে পারে তারা। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কয়লা-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা এখনও পলাতক। তৃণমূলের যুব নেতা তথা ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রেরও কোনও খোঁজ নেই। সিবিআইয়ের সন্দেহভাজনদের তালিকায় এই মুহূর্তেআরযাঁদের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে রুজিরা এবং মেনকা অন্যতম। এই দু’জনের সঙ্গে অনুপ এবং বিনয়ের যোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কয়লা পাচারের বিষয়ে ইসিএল, রেল এবং সিআইএসএফ-এর একাংশ কর্মীও জড়িত বলে সিবিআই-এর একটি সূত্র জানাচ্ছে। রাজ্যের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি যোগ মিলেছে বলেও খবর।
সোমবার অভিষেকের শ্যালিকামেনকা গম্ভীরকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা জেরা করে বেশ কিছু নতুন তথ্য জানতে পারে সিবিআই। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার ‘শান্তিনিকেতন’-এগিয়ে সিবিআই ততটা সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে জানা যাচ্ছে। এই দু’দিনের জেরা পর্বের একটি রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লিতে সিবিআই কর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশ আসার পরেই পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করবে নিজাম প্যালেস।
শুধু জেরাই নয়, যে দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে সন্দেহ, সে সম্পর্কে আরও তথ্য জোগাড়েরও চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। ওই ব্যাঙ্কের সদর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে সবিস্তার নথি চাওয়া হতে পারে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
এর পাশাপাশি সিবিআইয়ের আইন বিভাগের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরা করা নিয়েও সিবিআইয়ের সঙ্গে চাপানউতর শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সে কারণে সব দিকে থেকেই তৈরি থাকছে সিবিআই।