প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিটে কারচুপির অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক নিয়োগ মামলার চার্জশিটে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ তুলল সিবিআই। তারা জানিয়েছে, চক্রান্ত করে অযোগ্য প্রার্থীদের আড়াল করেছে পর্ষদ এবং ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা। পরীক্ষার ওএমআর শিটের নকশাতেই রয়েছে ষড়যন্ত্রের জাল। অভিযোগ, এমন ভাবে ওএমআর শিটগুলি তৈরি করা হয়েছে, যাতে কোনও ভাবেই পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত না করা যায়। যে কোনও পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ওএমআর শিটে রাখা হয়নি।
প্রাথমিকের মামলায় এর আগে কৌশিক মাজি নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির কর্তা তিনি। ওএমআর স্ক্যানিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, এই কৌশিকই প্রাথমিকে নিয়োগের ওএমআর শিট তৈরি করতেন। ওএমআর শিটের নকশা তৈরি করেছিলেন তিনিই। তাতে চাকরিপ্রার্থীর রোল নম্বর, জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, বুকলেট কোড, নির্দেশের মাধ্যম এবং ওএমআর শিটের নম্বর রয়েছে। কিন্তু আসল তথ্যই নেই!
সিবিআই জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীর নাম, বাবা অথবা অভিভাবকের নাম, জন্ম তারিখের মতো কিছু তথ্য, যা পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়, সেগুলি ইচ্ছা করেই ওএমআর শিটে রাখা হয়নি। আসলে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আড়াল করতেই ওই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল, দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার।
সিবিআই এমন দাবি করলেও, শিক্ষামহলের অনেকে বলছেন, এখন কোনও পরীক্ষাতেই পরীক্ষার্থীর নাম বা পিতৃপরিচয় লেখার জায়গা থাকে না। মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পরীক্ষাতেও একই নিয়ম। কোনও পরীক্ষার্থী ভুল করেও নাম লিখে ফেললে সেই উত্তরপত্র বাতিল করে দেওয়াই নিয়ম। যাবতীয় তথ্য থাকে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার হাতে। তবে, চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থীর নাম থাকার নজিরও রয়েছে। সে কারণেই সিবিআইয়ের সন্দেহ, উত্তরপত্র এমন করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে নাম, পরিচয় লেখার জায়গাই না থাকে। সিবিআই এমনও দাবি করেছে যে, অভিযুক্ত সংস্থা ওএমআর শিটের নকশা তৈরির পর পর্ষদ থেকে তা অনুমোদনও করায়নি। এখানেই অযোগ্যদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি আরও জোরদার হয়েছে।
২০১২ সালের টেটে যাঁরা অকৃতকার্য হয়েছিলেন, ২০১৪ সালের টেটে তাঁরাও বসেছিলেন। এই প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য-সহ প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ন্যাশানাল ইনফরমেটিক সেন্টার (এনআইসি)-এর মাধ্যমে। সেই তথ্য পর্ষদকে পাঠানো হয়েছিল। পর্ষদ তা তুলে দেয় এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির হাতে। ওই সংস্থাকেই টেট আয়োজন এবং ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের অভিযোগ, বর্তমানে পর্ষদ বা ওই সংস্থা— কারও কাছেই প্রার্থীদের তথ্য নেই। ফলে প্রার্থীদের শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে চার্জশিটে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে টেটের মতো পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অযোগ্য বলে দাবি করেছে সিবিআই। অভিযোগ, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সস্তায় এই সংস্থাকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
কৌশিককে গ্রেফতার করার পরেই সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, ওএমআর শিটের ‘ইমেজ কপি’ না রেখে ‘টেক্সট ফর্ম্যাট’-এ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই ফর্ম্যাটে উত্তরপত্র রাখলে তা সহজেই এডিট করা যায়। সিবিআইয়ের দাবি, উত্তরপত্রের ব্যাকআপ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কৌশিক-সহ তাঁর সংস্থার অংশীদারেরা। কৌশিকের আইনজীবীর দাবি, পর্ষদের নির্দেশেই তাঁর মক্কেল কাজ করেছেন।