উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে চলছে উদ্ধারকাজ। —ফাইল চিত্র ।
ধীরে ধীরে কমছে দূরত্ব। আর মাত্র ১৮ মিটার খুঁড়ে ফেললেই ব্যস। উদ্ধার করা যাবে উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে। বুধবার এমনটাই জানালেন উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক কর্তারা। উত্তরাখণ্ডের প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘বড় খবর’ আসছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের বার করে আনতে ২০ মিটারেরও কম পাথর এবং ধ্বংসাবশেষ সরানো বাকি রয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের সড়ক ও পরিবহণ বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিক মাহমুদ আহমেদ জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ সুড়ঙ্গের মুখে আটকে থাকা পাথর খনন করতে শুরু করে খননযন্ত্র অগার। দু’ঘণ্টার মধ্যেই সেটি ১৮ মিটার খনন করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘‘আমি এটা জানাতে পেরে খুশি যে, ৩৯ মিটার পর্যন্ত পাথর খোঁড়া হয়ে গিয়েছে। আমাদের অনুমান, শ্রমিকরা ৫৭ মিটার নীচে আটকে রয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের উদ্ধার করতে আর মাত্র ১৮ মিটার বাকি রয়েছে।’’ আহমেদ আরও বলেছেন, ‘‘যদি আর কোনও বাধা না আসে, তা হলে বুধবার রাতে বা বৃহস্পতিবার সকালে বড় খবর পাওয়া যেতে পারে।’’
আহমেদ আরও জানিয়েছেন, পাথরে গর্ত করার পাশাপাশি সেই গর্তে উদ্ধারকারীদের বার করে আনার জন্য ঢালাই করা পাইপ ঢোকানো হচ্ছে। আর সেই প্রক্রিয়াতেই অনেকটা সময় লাগছে বলেও আহমদ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঝালাই করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতে সময় লাগে। খনন করতে খুব বেশি সময় লাগে না। গভীর রাত থেকে ১৮ মিটার পাইপ ঢোকাতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে।’’
একটি অতিরিক্ত পাইপও সুড়ঙ্গের ভিতরে ২১ মিটার পর্যন্ত ঠেলে ঢোকানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহমদ।
ভারী ড্রিলিং মেশিনের বার বার বিকল হওয়ার কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ধীর, জটিল হয়েছে। গত সপ্তাহে একটি মেশিন বোল্ডারের মধ্যে পড়েছিল, যার ফলে টানেলের ছাদ ফাটল ধরে বলে মনে হওয়ার পরে তিন দিনের বেশি সময় ধরে ড্রিলিং স্থগিত করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরেই আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। সেই ঘটনার পর ১১ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও উদ্ধার করা যায়নি শ্রমিকদের। সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন জন। রাজ্য এবং কেন্দ্র— উভয় সরকারই ৪১ জন শ্রমিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের পাইপের সাহায্যে খাবার, অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে শ্রমিকদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাতের খাবারে পাঠানো হয় পোলাও, মটর পনির এবং দু’টি করে রুটি। শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই খাবারের ধরনে বদল আনা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে পাইপের ভিতর দিয়ে প্রায় দেড়শোটি খাবারের প্যাকেট শ্রমিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁদের কাছে মোবাইল, চার্জার, অর্ন্তবাস এবং তোয়ালে পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক সব কাজ এগোলে, খননযন্ত্রের সাহায্যে আগামী দু’দিনে আটকে পড়া সকলকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রাথমিক পরিকল্পনা সফল না হলে উদ্ধারকাজ বিলম্বিত হয়ে ১৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই সরকারি আধিকারিক। তার মধ্যেই আবার শ্রমিক পরিবারগুলির জন্য আশার খবর শোনাল প্রশাসন।