আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিল হাই কোর্ট। ফাইল ছবি।
মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী ১৭ এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসবেন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্য।
ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাপ্য ডিএ না পাওয়ায় আন্দোলনকারীরা কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন। এর জন্য একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার।
সেই মামলাতে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী ১৭ এপ্রিল কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাজ্যকে। সেই আলোচনায় যাতে কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ প্রসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ডিএ সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
ডিএ-র দাবিতে ধর্মতলায় সরকারি কর্মচারীদের যৌথমঞ্চ অবস্থানে বসেছে। এমনকি, চলতি মাসেই তাদের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসার কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেছেন। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ডেপুটেশন দেওয়ার কথা জানিয়েছে যৌথমঞ্চ।
আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। রাজ্য জুড়ে যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মাঝেই ডিএ মামলায় রাজ্যকে আলোচনায় বসার নির্দেশ দিল হাই কোর্ট। সেই আবহে হাই কোর্টে শুনানি চলাকালীন বৃহস্পতিবার সরকারি কর্মচারীরা দফতরে যাচ্ছেন কি না, জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। উত্তরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জানান, তাঁরা অফিসে গিয়েছেন। কিন্তু অনেকে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পর জরুরি পরিষেবা সচল রয়েছে কি না, জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। হাসপাতালগুলির অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন করেন।
বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে এজি জানান, জরুরি পরিষেবা সব চলছে। সেখানে কোনও অসুবিধা নেই। সব দফতরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা গ্রহণের ব্যবস্থা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। যা শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘তা হলে নির্দিষ্ট করে কী ভাবে জানবেন কত জন কর্মী দফতরে এসেছেন, আর কাজ করছেন?’’
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা বিচারাধীন। কর্মচারী সংগঠনগুলি তার জন্য অপেক্ষা করতে পারছে না? এখনই কেন কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ? মামলাকারীর দাবি, কর্মবিরতির ফলে ৪৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। এটা তো ভাবার বিষয়। এর জন্য অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন। ১৫ দিন পর আবার এমন পদক্ষেপ করলে তখন কী হবে?’’
কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবীর সওয়াল, এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেছেন। তার প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, কর্মবিরতির পথে না হেঁটে অন্য আইনি পদক্ষেপ করা যেত। এই কথোপকথনের পরেই রাজ্য সরকারকে কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।