গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বয়স ছ’বছর। জন্মস্থান এবং বাসস্থান কল্যাণী আদালত চত্বর। পরিচিতেরা ‘ঘনা’ নামেই চেনেন। মানুষ না হলেও, অনেক মানুষের সঙ্গে তার ‘আত্মিক সম্পর্ক’ রয়েছে। সেই কারণেই হয়তো তিন মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ‘ঘনা’কে খুঁজতে একেবারে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কয়েক জন আইনজীবী। অভিযোগ জানানোর পরেও কাজ না হওয়ায়, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হাই কোর্ট। শুক্রবার ওই ঘনা নামের ওই শূকরশাবককে খুঁজতে জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিল উচ্চ আদালত। বিচারপতি শম্পা সরকারের নির্দেশ, রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপারের তত্ত্বাবধানে ফের ‘ঘনা’কে খোঁজার তদন্ত শুরু করা হোক।
বেশ কয়েক বছর ধরে নদিয়ার কল্যাণী আদালত চত্বরে ঘুরে বেড়াত ছোট্ট শূকরছানা ঘনা। সেখানকার আইনজীবী, কর্মী, দোকানদার থেকে ঝাড়ুদার সবাই তাকে ভালবেসেই এই নামেই ডাকেন। গত ২৫ মার্চ থেকে সে নিখোঁজ। আইনজীবী শিবাজীকুমার দাস বলেন, ‘‘ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, ওই দিন ভোরে ঘনার পা বেঁধে কয়েক জন লোক একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিয়োতে গাড়ির নম্বর প্লেটও দেখা যায়। বিষয়টি কল্যাণী থানাকে জানানো হয়। তারা শুধু চুরির অভিযোগে এফআইআর করে।’’ আইনজীবীর অভিযোগ, পুলিশকে সব তথ্য দেওয়া সত্ত্বেও এত দিন তাদের তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। তাই হাই কোর্টে আসতে হয়।
এর আগে এই মামলায় কল্যাণী থানার কাছে রিপোর্ট চায় আদালত। শুক্রবার বিচারপতি সরকার সেই রিপোর্টে খুশি হননি। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আদালত চত্বরে এই ঘটনা আশাতীত নয়। এত কিছুর পরে অপরাধীদের পুলিশ এখনও শনাক্ত করতে পারল না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শূকরের পরিবর্তে মানুষ হলে কী করা হত?’’ বিচারপতির সরকারের আরও মন্তব্য, ‘‘এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে।’’
এই মামলার অন্য আইনজীবী অনুমিতা ভদ্রের কথায়, ‘‘শূকর ছানা বলে বিষয়টি লঘু করে দেখা উচিত নয়। প্রাণী রক্ষা আইন অনুসারে সকলেই সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে। ফলে আইন অনুযায়ী এই শূকর ছানাটিকেও রক্ষা করা দায়িত্ব।’’ তাঁর ধারণা, বিক্রির জন্য কোনও পশু পাচার চক্র ‘ঘনা’কে অপহরণ করেছে। প্রসঙ্গত, চার বছর আগেও ‘ঘনা’ এক বার নিখোঁজ হয়েছিল। সে সময় তদন্ত করে পুলিশ তাকে খুঁজে দেয়। ফের আবার নিখোঁজ হল কল্যাণী আদালতের ‘প্রিয় ঘনা’।