বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে), তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। ফাইল ছবি।
হেফাজতে থাকা কারও মন্তব্যের কোনও বৈধতা নেই। এমনই দাবি করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার এই দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। পাল্টা তিনি আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। শুভেন্দুর নিশানা থেকে বাদ যাননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তবে শুভেন্দুকে পাল্টা দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে হেফাজতে নেওয়া হয় তদন্তে সাহায্যের জন্য। হেফাজতে-থাকা কারও বয়ান যদি অগ্রাহ্য করা হয়, তা হলে তো গ্রেফতারটাই উঠে যাবে!’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘আগে শুভেন্দু বলুন, তিনি টাকা নিয়েছেন না নেননি। এত দিন ধরে এ বিষয়ে তো তিনি কোনও কথাই বলছিলেন না! এখন এত কথা কিসের!’’
সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার সারদাকর্তা সুদীপ্ত অভিযোগ করেছেন, সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নিয়েছিলেন শুভেন্দু। ওই বক্তব্য জানিয়ে কখনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন সুদীপ্ত। আবার কখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছেন তিনি।
সেই অভিযোগকে হাতিয়ার করে শুভেন্দুকে গ্রেফতার করার দাবি তুলে পথে নেমেছে তৃণমূল। এত দিন এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব আসেনি শুভেন্দুর তরফে। শুক্রবার অবশেষে মুখ খুলেছেন তিনি। রাজ্য বিধানসভার সামনে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু পাল্টা অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, অভিষেক এবং রাজ্য পুলিশে কর্মরত এক আইপিএস আধিকারিকের বিরুদ্ধে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না!’’
শুভেন্দুর দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের অন্তত ১০টি রুলিং আছে। হেফাজতে থাকা কোনও লোকের বিবৃতি আইনত বৈধ নয়।’’ শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, ‘‘এই চিঠিটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে ভাইপো, তৃণমূলের এক মুখপাত্র (কুণালের নাম করেননি তিনি) আর পীযূষ পাণ্ডে বলে এক জন আইপিএস— এঁরা এই চিঠি লিখিয়েছেন। আমি চাই, আমার ২০২০-এর ৯ ডিসেম্বরের চিঠি নিয়ে সিবিআই শুধু তদন্তটা করুক। তাহলে ষড়যন্ত্রী কারা, তাঁরা কী ভাবে এটা লিখিয়েছেন আর প্লটটা কে রচনা করেছেন তা বেরিয়ে আসবে।’’
মমতা এবং অভিষেককে হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কেনা-সহ অন্য বিভিন্ন মামলার চার্জশিট তৈরি হয়ে আছে। শুভেন্দুর এই দাবি নিয়েও পাল্টা দিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘শুভেন্দু কী করে জানলেন, চার্জশিট তৈরি হয়ে আছে? উনি কি সিবিআইয়ে কাজ করেন? উনি কী করে এ সব তথ্য পাচ্ছেন, এ বার তো আমরা সেটাই সিবিআইকে জিজ্ঞাসা করব।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু তো নিজে সিবিআইয়ের খাতায় অভিযুক্ত। ওঁকে সিবিআই ধরছে না কেন?’’
২০২০ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন সুদীপ্ত। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ২০২০-এর ডিসেম্বরে শুভেন্দু সিবিআইকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট কারও উস্কানিতে বা চাপে পড়ে সুদীপ্ত এই কাজ করছেন। সিবিআইকে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখারও দাবি জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। এত দিন পর সুদীপ্তের ধারাবাহিক অভিযোগের জবাব দিতে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক হাতিয়ার করেছেন দেড় বছর আগে লেখা তাঁর সেই চিঠিটিকেই।