শুনানির সময় নির্ধারণ করা নিয়ে বিচারপতি সঙ্গে আদালতকক্ষে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন আইনজীবী। —ফাইল ছবি।
হ্যারিকেন মিছিল মামলায় গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচীকে সতর্ক করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। বিচারপতির মতে, আদালতে কী ভাবে আচরণ করতে হয়, তা বোধ হয় জানেন না আইনজীবী। সেই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, আদালতকে অসম্মান করলে সেখানে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে।
বুধবার সন্ধ্যায় শহিদ মিনার থেকে হরিশ মুখার্জি রোড হয়ে কালীঘাট পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের হ্যারিকেন মিছিলের কর্মসূচিতে আদালতের নির্দেশে বাধা কেটেছে। তবে এই মিছিল আটকাতে হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে রাজ্য। এ নিয়ে মামলা রুজুর অনুমতিও দিয়েছে আদালত। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে এই মামলার শুনানির সময় নির্ধারণ করা নিয়ে বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন আইনজীবী কৌস্তুভ।
বিচারপতি মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় শুনানির কথা বললেও অন্য সময় তা শুরু করার কথা বলেন আইনজীবী কৌস্তুভ।
আদালতকক্ষে দু’পক্ষের বক্তব্য ছিল—
আইনজীবী কৌস্তুভ: এই মামলাটি বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গ্রহণ করা হোক। আমার কাছে মামলার কপি নেই। তা ছাড়া এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পরামর্শ নিতে হবে। আজ (মঙ্গলবার) মামলাটি শুনানি না করা হোক।
বিচারপতি মুখোপাধ্যায়: আপনাকে সময় দেওয়া হবে। কিন্তু মামলার শুনানি আজই হবে। (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টেয় শুনানি হবে।
আইনজীবী: ওই সময় আমার ব্যক্তিগত কাজ রয়েছে। অনুগ্রহ করে মামলাটি বুধবার নেওয়া হোক।
বিচারপতি: জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি করা হয়েছে। আজই শুনানি হবে।
আইনজীবী: বুধবার সন্ধ্যায় মিছিল রয়েছে। বুধবার সকালে মামলাটির শুনানি হোক। এতে তো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ক্ষতি হলে তো আমাদের হবে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিলে অংশ নেবেন। শেষ মুহূর্তে কর্মসূচি বাতিল হলে আমরাই ভুক্তভোগী হব।
বিচারপতি: মামলাটি আজ শুনানি হতে অসুবিধা নেই। আপনাকে তো সময় দেওয়া হচ্ছে।
কৌস্তুভ: আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, মামলাটির শুনানি করতে এই কোর্টের ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থেই বিচারপতি মামলাটি আজই শুনতে চাইছেন। বুধবার শুনলে কোনও অসুবিধা হত না।
বিচারপতি: এটা আপনি বলতে পারেন না। দ্রুত শুনানির আর্জি করা হয়েছে। এই কোর্টের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাই শুনছে। আমি কুড়ি বছর ওকালতি করেছি, জরুরি মামলায় কী ভাবে অংশ নিতে হয় তা আমার জানা রয়েছে। আমি যদি বলি, ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনি এই কোর্টে মামলার শুনানি করতে চান না। সেই কারণেই বুধবার শুনানি করতে বলছেন।
কৌস্তভ: ধর্মাবতারের এখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে বলতে হচ্ছে। (মঙ্গলবার বিকেল) সাড়ে ৩টের সময় আমার বাবার জন্য চিকিৎসকের সময় নেওয়া রয়েছে।
বিচারপতি: আপনার স্বার্থ রয়েছে সেটা বলুন। এক জন আইনজীবী হিসাবে আদালতের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করা উচিত তা মনে হয় আপনার জানা নেই। আইনজীবী হিসাবে নিজের মর্যাদা, আদর্শ বজায় রাখুন। আদালতকে সম্মান করতে শিখুন। না হলে আপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বলব বার কাউন্সিলকে। কোর্টে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। সতর্ক করছি আদালতের সঙ্গে সঠিক আচরণ করুন।
কৌস্তভ: তা হলে মামলাটি এখনই শুনুন। বিকেলে আমার সময় হবে না।
বিচারপতি: আপনার কথায় কোর্ট চলবে না। কোর্ট নিজের পদ্ধতিতে চলবে। কোর্টের সময়েই শুনানি হবে। আজই (শুনানি) হবে।
এর পরেই মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় মামলাটির শুনানির সময় ধার্য করা হয়।