বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এজলাসে বসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আলোচনা করছিলেন বাংলার নবজাগরণ নিয়ে। উঠে আসছিল একের পর একে বাংলার মনীষীদের প্রসঙ্গও। হালকা মেজাজে কথা বলতে বলতে হঠাৎই গম্ভীর হলেন বিচারপতি। তাঁর মুখে শোনা গেল বাংলার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কথা। বললেন, ‘‘মনীষীদের কিন্তু চাকরি বিক্রি করতে হয়নি।’’
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে ব্যস্ত দিন। এর মধ্যেই একের পর এক মামলা আসছিল বিচারপতির কাছে শুনানির জন্য। এজলাসে বসে পর পর মামলা শুনছিলেনও বিচারপতি। এই সময়েই এক মহিলা আইনজীবী প্রাথমিকের একটি মামলায় বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর বক্তব্য শোনার পর বিচারপতিও তাঁকে পাল্টা কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেখান থেকেই ঘটনার শুরু।
বিচারপতির প্রশ্নের উত্তর ছিল না আইনজীবীর কাছে। বিচারপতি তাঁকে তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেন। আইনজীবী জানান, তাঁর নাম রেনেসাঁ। এই নাম নিয়েই আইনজীবীর সঙ্গে কথোপকথন শুরু হয় বিচারপতির। তিনি ওই আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, রেনেসাঁ বা নবজাগরণ কোথায়, কবে হয়েছিল জানেন? আইনজীবী জবাব দেন। শুনে বিচারপতি আবার জানতে চান, ‘‘বলুন তো ভারতে কোথায় কোথায় নবজাগরণ হয়েছিল? বাংলায় কবে নবজাগরণ হয়েছিল?’’ উত্তর অবশ্য নিজেই দিয়ে দেন বিচারপতি।
সোমবার এজলাসে বসেই বিচারপতি বলতে শুরু করেন ‘‘রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে বাংলায় নবজাগরণ হয়েছিল। গত শতাব্দী পর্যন্ত তা চলছিল। বাংলার নবজাগরণের মনীষীরা শিক্ষাদানের কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। শিক্ষার অগ্রগতিতে তাঁরা কাজ করেছেন।’’ এ পর্যন্ত বলে একটু থামেন বিচারপতি। তার পর বলেন, ‘‘এঁরা শিক্ষা দিতেন। কিন্তু চাকরি বিক্রি করতেন না।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি সংক্রান্ত বহু মামলার শুনানি হয়েছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তিনিই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে। সেই সব মামলার শুনানিতে বহুবার দুর্নীতিগ্রস্তদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবারও করলেন। তবে এ বার বাংলার গৌরবের দিনের সঙ্গে তুলনা করে সমালোচনা করলেন তিনি।