গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কামদুনি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে— তাই সেই রায়ে স্থগিতাদেশ চাইল রাজ্য। সোমবার সকালেই এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ আবেদন করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই মামলা জরুরি ভিত্তিতে শোনা হয় শীর্ষ আদালতের চার বিচারপতির বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্ট এখনই হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ না দিলেও কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে বেঁধে দিয়েছে সময়ও।
কামদুনির ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গত শুক্রবার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। এই মামলায় যে তিন জনের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত, তাদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে হাই কোর্ট। বাকি দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও চার দোষী সাব্যস্তের সাজা মকুবও করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সোমবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। কেন ওই স্থগিতাদেশ চাওয়া হচ্ছে তার যুক্তি হিসাবে রাজ্য জানায়, এই ধরনের অপরাধের অপরাধী বেকসুর খালাস পেলে রাজ্যে আইন- শৃঙ্খলার সমস্যা হবে, তাই হাই কোর্টের রায়ে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। তার পরও অবশ্য সোমবার শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়নি।
মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতি বি আর গভাইয়ের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ রাজ্যের বক্তব্য শোনার পর সোমবার বলে, আগে এই মামলার সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে চায় তারা। তার পর স্থগিতাদেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। একই সঙ্গে যে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তকে বেকসুর খালাস করেছিল হাই কোর্ট, তাঁর কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না? উত্তর দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ জানিয়েছে, এক সপ্তাহ পর আবার মামলাটি শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজ্যের তরফে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছিলেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল এবং আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ। তাঁরাই সুপ্রিম কোর্টকে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত এক আসামীকে বেকসুর খালাস করেছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তেরও সাজা মকুব করেছে হাই কোর্ট। ঘটনাটির গুরুত্ব এবং ভয়াবহতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাজ্যের তরফে আইনজীবীরা বলেছিলেন, এমন একটি মামলার দোষীদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তবে রাজ্যে অশান্তি তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবারের ওই রায়ের পর কামদুনির ধর্ষিতার দুই বন্ধু এবং তাঁর পরিবার নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছিলেন। এমনকি, এ-ও বলেছিলেন, ‘‘এ রাজ্যে আর সুবিচারের আশা নেই আমাদের।’’ কিন্তু রাজ্যের তরফে এর পর জানিয়ে দেওয়া হয়, হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। এ ব্যাপারে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার দায়িত্বও দেওয়া হয় রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডিকে। সোমবার, হাই কোর্টের রায় ঘোষণার ঠিক তিন দিনের মাথায় এ নিয়ে বিশেষ আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির বেঞ্চে।
২০১৩ সালে ঘটেছিল কামদুনির ঘটনা। নৃশংস ওই ঘটনার বিচারে তিন দোষী সাব্যস্ত সইফুল আলি, আনসার আলি, আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেয় নিম্ন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করকে। গত শুক্রবার সাইফুল এবং আনসারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে বাকিদের সাজা মকুব করে কলকাতা হাই কোর্ট।