প্রতীকী ছবি।
একটু ধৈর্য রাখুন। দিন পাল্টাবেই!
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ‘খুনের আসামি’ রামকৃষ্ণ দাসের বাবাকে বুঝিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী গোবিন্দ ঘোষ।
গোবিন্দবাবু নিজেও একদা খুনের আসামি। একটি রাজনৈতিক খুনের মামলায় নাম জড়ানোয় ১৪ বছর জেল-যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তাঁকেও। গোবিন্দবাবু, তাঁর সহযোগী পোড়খাওয়া উকিল উদয়চন্দ্র ঝা, মহেশ্বরী শর্মা, তুলিকা রায়েদের আইনি যুদ্ধে এ বার বন্দি রামকৃষ্ণের বৃদ্ধ বাবার মুখে হাসি ফুটতে চলেছে। গত ২৬ জুন রামকৃষ্ণকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডল।
বছর সাতাশের রামকৃষ্ণ সাত বছর ধরে জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। জেলকর্তারা জানান, হাইকোর্টের কাগজ এলেই মুক্তির প্রক্রিয়া সারা হবে। ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারে নিজের ঠাকুরমা সুরবালাদেবীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন রামকৃষ্ণ। ২০১৩-র ১৯ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় তাঁকে। ছেলেকে মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রামকৃষ্ণের বাবা জ্যোতিষ দাস।
মামলা লড়তে গিয়ে গোবিন্দবাবু, উদয়বাবুরা দেখেন, পুলিশের তথ্যপ্রমাণে বিস্তর ফাঁক! সেটাই তুলে ধরেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি গ্রহণ করেই বিচারপতিদের রায়ে বলা হয়েছে, নিহত বৃদ্ধার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এফআইআরেও জবানবন্দির কথা লেখা হয়নি। কিন্তু পরে বিচারের সময় দুই পুলিশকর্মীকে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়ে বলা হয়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বৃদ্ধা অভিযোগ করেছেন নাতির নামেই।
সে-দিন দিনহাটায় রামকৃষ্ণের পাত্রী দেখতে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। ঠাকুরমা একা ছিলেন। জ্যোতিষবাবুরা ফিরে এসে দেখেন, সুরবালার ক্ষতবিক্ষত দেহ বিছানায় পড়ে। রামকৃষ্ণ দিনহাটায় যাননি। কিন্তু বিচারপতিরা বলেন, ‘‘খুনের সময় বাড়িতে অভিযুক্তের উপস্থিতিও স্পষ্ট নয়। সব দিক দেখে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ বা সন্দেহের অবকাশ থাকায় রামকৃষ্ণকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।’’ গোবিন্দবাবু বলেন, ‘‘মনে হয়েছিল, আর কাউকে না-পেয়ে পুলিশ ছেলেটাকে ফাঁসাচ্ছে।’’
নিকটজনকে খুনের অভিযোগ ঘাড়ে চাপার আগে ফোটোকপির ছোট্ট একটি দোকান চালাতেন রামকৃষ্ণ। ঠাকুরমার অপমৃত্যুর পরে সব বিপর্যস্ত হয়ে যায়। এই সাত বছরে মাকে হারিয়েছেন তিনি। রেলের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বাবা জ্যোতিষবাবু আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত। যুবক রামকৃষ্ণের দুর্ভাগ্যের কথা বলতে গিয়ে চিকচিক করে ওঠে গোবিন্দবাবুর চোখ। লৌহকপাটের অন্তরালে জীবনের দীর্ঘ চোদ্দোটি বছর ভেসে গিয়েছে তাঁরও। বললেন, ‘‘নিজেও তো এই কষ্ট পেয়েছি।’’ ২০০২ থেকে ওকালতি করছেন। বিচার না-পাওয়া বন্দিদের বন্ধু বলে পরিচিত গোবিন্দবাবু এ দেশের আইনজীবীদের মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।