গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তাঁর পরিচয় বিবিধ। তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী। তবে তার আগে তিনি নাট্যকার, অভিনেতা এবং চিত্রপরিচালকও বটে। তিনি ব্রাত্য বসু। ব্যক্তিগত ভাবে যাঁরা তাঁকে জানেন, তাঁরা জানেন হিন্দি ছবির অন্যতম পরিচালক শ্রীরাম রাঘবনের অন্ধ ভক্ত তিনি। সেই রাঘবনের ছবির সঙ্গে প্রায় গায়ে-গায়ে মুক্তি পাবে ব্রাত্যের পরিচালিত ছবি ‘হুব্বা’।
এমন কাকতালীয় ঘটনার কথা জানতেন না ব্রাত্য। সম্প্রতি বিধানসভায় মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় নিজের পছন্দের পরিচালক রাঘবনকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন ব্রাত্য। সেই সময় তাঁর পরিচালিত ‘হুব্বা’-র মুক্তির দিন নিয়ে প্রশ্ন করায় ব্রাত্য জানান, জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে মুক্তি পাবে ছবিটি। তখনও পর্যন্ত ব্রাত্য জানতেন না, যে তাঁর প্রিয় পরিচালকের ছবি মুক্তি পাবে তাঁর ছবির মুক্তির ঠিক এক সপ্তাহ আগে।
কাকতালীয় হলেও ভক্ত আর ভগবানের ছবির গায়ে গায়ে মুক্তি অনেকটা একই কারণে। রাঘবন পরিচালিত সব ছবিই দেখেন ব্রাত্য। ‘অন্ধাধুন’, ‘জনি গদ্দার’, ‘বদলাপুর’ তাঁর পছন্দের তালিকায়। রাঘবনের আগামী ছবি ‘মেরি ক্রিসমাস’। সেই ছবি দেখবেন বলে মনস্থির করেই ফেলেছেন দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য। খোঁজ নিয়ে মুক্তির তারিখও জেনেছিলেন। ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ‘মেরি ক্রিসমাস’-এর। কিন্তু শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে জোড়া বড় হিন্দি ছবি। সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা পরিচালিত ‘অ্যানিম্যাল’ এবং মেঘনা গুলজার পরিচালিত ‘শ্যামবাহাদুর’। এই দুই ছবির চাপের মুখে পড়তে না চেয়ে প্রথমে রাঘবন চেয়েছিলেন ৮ তারিখ বাদ দিয়ে ডিসেম্বরের অন্য কোনও এক শুক্রবার তাঁর ছবির মুক্তি হোক। কিন্তু ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আরও দু’টি বড় ছবি মুক্তি পাবে। প্রথমটি রাজকুমার হিরানি পরিচালিত এবং শাহরুখ খান অভিনীত ‘ডাঙ্কি’। দ্বিতীয়টি কেজিএফ সিরিজ ছবির পরিচালক প্রশান্ত নীল পরিচালিত ও প্রভাস অভিনীত ‘সালার’। ওই দু’টি ছবি মুক্তির কারণে নিজের ছবির মুক্তি নতুন বছরে নিয়ে গিয়েছেন শ্রীরাম। আগামী বছর ১২ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ক্যাটরিনা কইফ ও বিজয় সেতুপতি অভিনীত ছবি ‘মেরি ক্রিসমাস’।
ব্রাত্যও চেয়েছিলেন তাঁর ছবি ‘হুব্বা’ মুক্তি পাক নভেম্বর বা ডিসেম্বরে। কিন্তু বড় বড় হিন্দি তথা সর্বভারতীয় ছবির মুক্তির কথা মাথায় রেখেই নিজের ছবির মুক্তি আগামী বছরের ১৯ তারিখে নিয়ে গিয়েছেন তিনি।
অন্ধকার জগতের সঙ্গে যুক্ত কাহিনি থ্রিলারের কায়দায় বলতে পছন্দ করেন শ্রীরাম। ব্রাত্যও এমন ঘরানা ছবি তৈরি করেছেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘রাস্তা’ ছিল বাংলার অন্ধকার জগতের কাহিনি। আবার ‘হুব্বা’-ও তৈরি হয়েছে তেমনই এক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলায় আবির্ভূত হয় ‘হুব্বা শ্যামল’ নামে এক জন গ্যাংস্টার। সে ছিল হুগলি জেলার অপরাধজগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। খুন, জখম, অপহরণ, মাদক পাচার ইত্যাদি বহু অপরাধে অপরাধী ছিল সে। অজস্র মামলা ছিল তার নামে। একটা সময়ে ভোটেও দাঁড়াতে চেয়েছিল হুব্বা। ২০১০ সালের পুরভোটে কোন্ননগর পুরসভা এলাকার এক কংগ্রেস নেতার কথায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নও দিয়েছিল সে। যদিও শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় হুব্বা।
২০১১ সালে হুব্বার লাশ ভেসে ওঠে বৈদ্যবাটির খালে। তাকে ঘিরেই ব্রাত্যের নতুন ছবি ‘হুব্বা’। যদিও এ ক্ষেত্রে বিতর্ক এড়াতে ছবিতে হুব্বার চরিত্রটির নাম ‘বিমল’ দেওয়া হয়েছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন ব্রাত্যের স্ত্রী তথা অভিনেত্রী পৌলোমী বসু এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিম। তিনিই অভিনয় করেছেন হুব্বার চরিত্রে।