ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য। — ফাইল ছবি।
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্তরে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা। মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে কারচুপি রুখতেই লিংডো কমিশনের সুপারিশ করা এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আর তা পশ্চিমবঙ্গে শুরু করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেন্দ্রীয় স্তরে অনলাইন পোর্টাল চালু করব। পুরুলিয়া থেকে বসে একটি ছেলে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় কত আসন, বিষয় অনুযায়ী, জাতি-বর্ণ-ধর্ম অনুযায়ী তা দেখতে পারবেন। পোর্টালেই তিনি টাকা জমা করবেন। তার পর তিনি ভর্তি হবেন। এটাই অনলাইন ভর্তির মূল কথা।’’
এই ব্যবস্থায় কোনও কারচুপির সুযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে কোনও কারচুপির সুযোগ নেই। কারচুপি আটকানোর জন্যই এটা করা হচ্ছে। এটা লিংডো কমিশনের সুপারিশ। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে কী ভাবে স্বচ্ছতা আনা যায়, তার জন্যই।’’ ব্রাত্য এ-ও মনে করিয়ে দেন, ‘‘মাথায় রাখতে হবে, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, ত্রিপুরায় ভর্তির এই ব্যবস্থা নেই। কেরলেও নেই। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম শুরু করলেন।’’
সোমবার এই ব্যবস্থায় ভর্তি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল শিক্ষা দফতর। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সব সরকারি ও সরকার অনুমোদিত কলেজগুলিতে ভর্তির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে অনেক দিন ধরেই উদ্যোগী তারা। সেই লক্ষ্যেই এই কেন্দ্রীয় পোর্টাল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এত দিন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পৃথক ভাবে অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। তাতে প্রতিটি কলেজের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে ভর্তির আবেদন এবং ফি দিতে হত। শুধু তা-ই নয়, কলেজভেদে ভর্তির আবেদনের সময়সীমা আলাদা হত বলেও সমস্যায় পড়তে হত পড়ুয়াদের। সেই কারণে বহু কলেজে অনেক আসন খালিও থেকে যেত। এই সব বিষয় নজরে রেখেই কেন্দ্রীয় পোর্টাল তৈরির কথা ভেবেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্তি হওয়া যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পোর্টাল দেখভাল করবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। রক্ষণাবেক্ষণও তারাই করবে। ভর্তির সময় সংসদের একটি নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফি জমা দিতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তির সময় ছাত্র ইউনিয়নগুলি পড়ুয়াদের থেকে বিপুল অর্থ দাবি করে বলে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ ছিল। তার পরেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া অনলাইন করার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। সেই মতো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পৃথক পোর্টালের ব্যবস্থা করে অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতর বিষয়টি এক ছাতার তলায় আনার পক্ষপাতী ছিল, যাতে গোটা প্রক্রিয়া শিক্ষা দফতর সরাসরি নজরদারিতে রাখতে পারে।