(বাঁ দিকে) ইন্দ্রনীল খাঁ। জেপি নড্ডা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ার জন্য রাজ্য বিজেপি একটি ‘গ্রামে চলো’ কর্মসূচি নিয়েছিল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সেই কর্মসূচির দায়িত্ব দিয়েছিলেন যুব মোর্চাকে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস জুড়ে তিন দফায় হয় কর্মসূচি। যুব মোর্চা মোট ১৮০টি বিধানসভা এলাকার দু’হাজার গ্রামে যাওয়ার দাবি করে। এর পরে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ গোটা কর্মসূচির একটি রিপোর্ট তৈরি করে দিয়েছিলেন মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যকে। তা জমা পড়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কাছেও। এ বার নড্ডা গোটা দেশেই লোকসভা নির্বাচনের একই রকম কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট সাত লাখ গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির তরফে অনেকেই নড্ডার নির্দেশিত এই কর্মসূচি বাংলাকে দেখেই বলে দাবি করলেও তেমনটা বলছেন না ইন্দ্রনীল। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বিশ্বের সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। সেখানে দেওয়া নেওয়ার ভিত্তিতেই কর্মসূচি হয়। একে অপরের থেকে শেখা চলতে থাকে। আসলে আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেখানো পথে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ সব কাজ করে থাকি। আলাদা করে কোনও কৃতিত্বের দাবি করা আমাদের শিক্ষা নয়। নড্ডাজি যে নির্দেশ দিয়েছেন তা আমরা পালন করব। তবে এটাও ঠিক যে, আমাদের ওই কর্মসূচি খুবই সফল হয়েছিল।’’ বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বাংলার এই কর্মসূচির খুবই প্রশংসা করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। তিনিই নাকি নড্ডার সঙ্গে কথা বলে এই কর্মসূচি দেশের জন্য গ্রহণ করার আর্জি জানান।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদায় রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পুজো দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে ছিলেন সুকান্তও। প্রচার শেষে স্থানীয় মহাদেব মন্দির দর্শন ও সেখানে অন্নভোগ খান বিজেপি নেতারা। মাঝে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে মাটিতে বসে ‘উঠোন বৈঠক’ও করেন সুকান্তেরা। এই ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি পালন করেছিলেন বাংলার যুব মোর্চার সদস্যরা। প্রসঙ্গত, যে মরিশদা থেকে বিজেপি এই কর্মসূচি শুরু করে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানে ভাল ফল করে বিজেপি। পরে রাজ্য যুব মোর্চা দাবি করেছিল, যে সব গ্রামে তারা গিয়েছিল তার ৫০ শতাংশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্মের ফল ভাল হয়।
এ বার যা ঠিক হয়েছে তাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন বছরের প্রথম দু’মাসে গ্রামে গ্রামে যেতে হবে যুব মোর্চাকে। ইতিমধ্যেই বাংলাতেও এসেছে নড্ডার নির্দেশ-চিঠি। এই কর্মসূচিতে মূলত মোদী সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা বলতে হবে। রাজ্যের ক্ষেত্রে বাংলা কোন কোন খাতে কেন্দ্রের কত টাকা পেয়েছে এবং অতীতে কত পেত সে তথ্যও জানাতে হবে। সেই সঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলে ধরতে হবে। কর্মসূচির নাম— ‘গাঁও গাঁও চলো অভিযান’।
২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে গ্রামের সংখ্যা ৬,৪০০-র আশপাশে। তবে বিজেপি বড় গ্রামগুলিকে দু’ভাগ করে মোট সাত লাখ গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। নড্ডার যে নির্দেশ তাতে, প্রতিটি গ্রামে এক জন করে নেতাকে দায়িত্ব দিতে হবে। রাজ্যের পদাধিকারী থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গ্রামে যাবেন। এ ছাড়াও জাতীয় ভোটার দিবসের (২৫ জানুয়ারি) আগে ২৪ জানুয়ারি দলের যুব মোর্চার পক্ষে দেশের পাঁচ হাজার জায়গায় বড় সমাবেশ করতে হবে। সেই সব সভাতে কমপক্ষে এক হাজার প্রথমবারের ভোটারকে হাজির করতে হবে। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজেপি দেশে মোট ৫০ লাখ নতুন ও প্রথম ভোটারের কাছে পৌঁছতে চায়।