ফাইল চিত্র
কথা ছিল, পুজোর পরেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে রাজ্য জুড়ে প্রচারে নামবে বিজেপি। বাস্তবে পুজোর পরে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর জীবন ও বাণী প্রচারে নামছে বিজেপি।
গাঁধীর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজেপি ২ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশ জুড়ে ‘গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা’র ডাক দিয়েছে। এ রাজ্যে ওই যাত্রা হবে ১৫ থেকে ২৬ অক্টোবর। জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা নিয়ে প্রতি দিন অন্তত ১৫ কিলোমিটার করে হাঁটবেন অংশগ্রহণকারীরা। প্রতি লোকসভায় ১৫০ কিলোমিটার যাত্রা হবে। যার মূল উদ্দেশ্য গ্রাম-গঞ্জগুলিকে ছুঁয়ে যাওয়া। যে সব গ্রামে তা সম্ভব হবে না, সেই সব গ্রাম থেকে ছোট ছোট যাত্রা এসে সংশ্লিষ্ট লোকসভার বড় যাত্রায় মিশবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যম্ত যাত্রার মাঝখানে থাকবে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। সেই সময় অথবা সন্ধ্যায় যাত্রা যেখানে থাকবে, সেখানে জনসভা হবে।
রাজ্য জুড়ে এই কর্মসূচি রূপায়নের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংহ, সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং যুব নেতা অনুপম ঘোষ। প্রত্যেক সাংসদ এবং লোকসভার প্রার্থীকে নিজ নিজ লোকসভা কেন্দ্রের যাত্রার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যসভার দুই মনোনীত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে যথাক্রমে যাদবপুর এবং ডায়মন্ড হারবারে যাত্রার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সব ক্ষেত্রের জন প্রতিনিধিদের ওই যাত্রায় অংশ নিতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় এই যাত্রার দায়িত্বে থাকার কথা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে নবাগত বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের। বেহালায় ওই দায়িত্ব শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দিতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু দলের তরফে সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, শোভনবাবু কলকাতার বাইরে আছেন বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন। এ বিষয়ে শোভনবাবুর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
দিলীপবাবু রবিবার বলেন, ‘‘এই কর্মসূচিতে রাজনীতির থেকে সামাজিক বার্তাই বেশি দেওয়া হবে। যেমন— গাঁধীর অহিংসা নীতি প্রচারের পাশাপাশি জল সংরক্ষণ, প্লাস্টিক-মুক্ত সমাজ এবং নেশামুক্ত জীবন গড়ার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হবে যাত্রায়।’’
বিরোধীরা অবশ্য বিজেপির এই কর্মসূচিকে ‘লোক ঠকানো’ বলে কটাক্ষ করছে। কংগ্রেসের যুক্তি, গাঁধী অস্পৃশ্যতাহীন সমাজ গঠন এবং হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ঐক্যসাধনে তৎপর ছিলেন। আর বিজেপি প্রতি পদে তার বিপরীত কাজের দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। সুতরাং, বিজেপির গাঁধী-স্মরণ হাস্যকর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘বিজেপির যে সাংসদ গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমিক আখ্যা দেন, তাঁর সঙ্গেই নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ সভায় থাকেন। গাঁধী এবং গডসে প্রেম একসঙ্গে চলতে পারে না!’’ তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে যাঁরা পুজো করেন, গাঁধীর ছবি সামনে রেখে তার দিকে রিভলবার তাক করে সাজিয়ে রাখেন, তাঁরা আবার গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রা করছেন! এটা উপহাস না পরিহাস বুঝতে পারছি না।’’