জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি বাছাই করা ১০ জনের নাম রাজ্যস্তরে পাঠিয়েছে। প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোট ‘সংঘর্ষপূর্ণ’ হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে কী ভাবে? রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, জেলাস্তরে ১০ জনের বিশেষ দল তৈরি করা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। এমনই বার্তা পেয়ে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি বাছাই করা ১০ জনের নাম রাজ্যস্তরে পাঠিয়েছে। আগামী ২৯-৩০ জানুয়ারি তাঁদের ‘বিশেষ প্রশিক্ষণ’ হওয়ার কথা।
কাদের বাছাই করা হচ্ছে? বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, তাঁদের যেন মোটরবাইক থাকে, স্মার্টফোনে নানা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার এবং ই-মেল পাঠানোর দক্ষতাও থাকতে হবে। প্রাক্তন আমলা বা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের ওই বাছাই করা দশ জনের মধ্যে নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে জেলা নেতাদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা যে তালিকা রাজ্যস্তরে পাঠিয়েছে, তাতে দু’জন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীর নাম রয়েছে বলে দাবি বিজেপি সূত্রের।
অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ভারতী ঘোষ রাজ্যস্তরে বিজেপির প্রশাসন এবং নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষাকারী কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচনে তৃণমূল সন্ত্রাস করে, গায়ের জোরে আমাদের মনোনয়ন দিতে বাধা দেবে। ভোট লুট করবে। আমরা সেই সন্ত্রাস প্রতিহত করার জন্য যা যা পরিকল্পনা করার করব।’’ অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-আইএএসরাও কি এই পরিকল্পনার অংশ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা চলছে। এখনই সেই বিষয় কিছু বলছি না। যা হবে দেখতে পাবেন।’’
সূত্রের খবর, জেলার কমিটির কাছে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকদের নাম, ফোন নম্বর এবং ই-মেল রাখতে বলা হয়েছে। কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার সব সরকারি, বেসরকারি এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের তালিকা তৈরি করে রাখতে হবে। জেলার কমপক্ষে দশ জন আইনজীবী, যাঁরা ফৌজদারি মামলা লড়তে অভ্যস্ত, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মামলার জন্য তৈরি রাখতে হবে। এ ছাড়া ‘এলাকাভিত্তিক তৃণমূলের দুষ্কৃতী এবং অত্যাচারী নেতাদের তালিকা তৈরি করে শীঘ্রই পাঠাতে হবে’।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা এখনও হয়নি। কবে হবে, সে খবরও নেই। তার আগেই ভোট ‘সংঘর্ষপূর্ণ’ হবে কেন বলা হচ্ছে— এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের একাংশকে। কিছু বিজেপি নেতা মনে করছেন, দলের ‘এমন’ পর্যবেক্ষণে বহু সাধারণ কর্মী বা তাঁদের পরিবার ‘ভয়’ পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলের ভোট-প্রচারে সমস্যা হতে পারে। যদিও বিজেপির এক রাজ্য নেতার দাবি, “রাজ্যের গত পঞ্চায়েত ভোট, পুরভোট এবং নানা উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতার নিরিখেই দল এই বার্তা দিয়েছে।” বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর অবশ্য দাবি, “তৃণমূলের হাতে আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা বার বার মার খাচ্ছেন। তার পাল্টা প্রস্তুতি নিতেই হবে।”
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের কটাক্ষ, “কী ভাবে অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে হয়, সেটিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি। এটা হয়তো তেমনই আর এক কৌশল।” (সহ-প্রতিবেদন: বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়)