ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে করোনা ভ্যাকসিনও ইস্যু হতে চলেছে। প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধাদের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ ভ্যাকসিন-এর কৃতিত্ব রাজ্য সরকার নিতে চাইছে বলে আগেই আক্রমণ শুরু করে রাজ্য বিজেপি। আর শনিবার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে সেই অভিযোগকেই বিধানসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর তোড়জোড় আরম্ভ করে দিল পদ্ম শিবির। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন চুরির অভিযোগ তোলাও শুরু হয়ে গেল। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে একযোগে সেই আক্রমণ শানালেন পদ্ম শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারাও। রবিবার রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইট করে ভ্যাকসিন চুরির অভিযোগ তুলেছেন। একই সঙ্গে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, করোনা টিকাকরণেও দুর্নীতি করছে তৃণমূল।
বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর। টিকাকরণ নিয়ে নবান্নে ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা অভিযোগ করেন, রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় কম ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে কেনা হবে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র প্রথম সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদের জন্যই নয়, বরং রাজ্যের প্রতিটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিষেধক দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে ইতিমধ্যেই অনুরোধ করেছি।”
নবান্নের দাবি, কেন্দ্র ৩ লক্ষ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। রাজ্যের পাঠানো তালিকায় ৩ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর নাম রয়েছে। তাঁদের দু’টি করে ভ্যাকসিন দিতে হলে প্রয়োজনের তুলনায় কম টিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। শনিবারই এর জবাব দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকার কি আদৌ পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠিয়েছে? আর সেই তালিকায় কি তৃণমূলের বিধায়কদের নাম আছে? নাম না থাকলেও তাঁরা যদি প্রতিষেধক নিয়ে ফেলেন, তা হলে তো কম পড়বেই।’’ একই দিনে দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় মুর্শিদাবাদে বলেন, ‘‘কেন্দ্র সব রাজ্যকে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে।’’ এর পরে টুইটে কৈলাস অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের গুন্ডা ও বিধায়করা জোর করে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সিরাজকে ফিরিয়ে দলবদলের দাবায় এ বার পাল্টা চাল
শনিবার দিলীপ, কৈলাসদের আক্রমণ রবিবার যেন সংগঠিত চেহারা নিল। শনিবার করোনার টিকা নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল। টিকা নিয়েছেন সেখানকার প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরা এবং কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। তা নিয়ে রবিবার সকালে কলকাতায় দিলীপ বলেন, ‘‘তৃণমূল বিধায়ক-নেতারা রেশনের চাল, আমপানের টাকার মতো ভ্যাকসিনেও ভাগ বসাচ্ছে। সেই জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কম পড়ছে।’’
আরও পড়ুন: ১৩০ আসন চায় কংগ্রেস, রাজি নয় বাম, পারদ চড়ল জোটের বৈঠকে
অন্য দিকে, অমিত মালব্য টুইট করে বলেছেন, ‘প্রথমে তারা গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ রেশন চুরি করল, তারপর আমপান পরবর্তী পর্যায়ে অনুদানের টাকা চুরি করল আর এখন করোনায় প্রথমসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পাঠানো ভ্যাকসিন চুরি করছে। একমাত্র পিসির তৃণমূলই এই বিরল প্রতিভার পরিচয় দিতে পারে’।
কাঁথির ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান প্রদীপ গায়েনের টিকা নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। টুইটারে লিখেছেন ‘করোনা টিকাকরণেও তৃণমূলের দুর্নীতি। নিয়মানুযায়ী প্রথম দফার করোনা ভ্যাকসিন বরাদ্দ প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য। তা হলে কাঁথি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান প্রদীপ গায়েন ভ্যাকসিন পান কী ভাবে?’
এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠকে ঢোকার আগে তিনি বলেন, ‘‘একটি দল যখন আদর্শগত ভাবে অধোগামী হয়, তার নিদর্শন পেশ করে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘জনসমক্ষে এ নিয়ে সমালোচনা চললেও অনুতাপ নেই তৃণমূলের। অপরদিকে বিজেপির আদর্শ, সবার আগে সাফাইবন্ধু। তার পরে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নেবেন। তার পরে নেতা মন্ত্রীরা।’’