দুই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল ও মধুছন্দা। ফাইল চিত্র
রাজ্য বিজেপি-র নতুন কমিটি বুধবার ঘোষণা করেছেন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর সেই কমিটিতে রাজনীতিকের থেকে পেশাদার বেশি রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরেই। প্রশ্ন উঠেছে, গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে কলকাতার দুই ক্যানসার বিশেষজ্ঞকে বসানো নিয়ে। বিজেপি-র অন্যতম সহ-সভাপতি হয়েছেন চিকিৎসক মধুছন্দা কর। আবার বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে সরিয়ে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি করা হয়েছে আর এক চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খাঁকে।
ঘটনাচক্রে এই দু’জনই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আরও মিল রয়েছে মধুছন্দা এবং ইন্দ্রনীলের মধ্যে। দুই ক্যানসার বিশেষজ্ঞই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া। দু’জনেরই লেখাপড়া কলকাতায় এবং মধুছন্দা কিংবা ইন্দ্রনীল সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-রও প্রাক্তনী। আরও একটা মিল, দু’জনের দাবি, পেশা সামলে তাঁরা রাজনীতিতে সময় দিতে পারবেন।
বুধবার দায়িত্ব পেয়েছেন মধুছন্দা। বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করতেই জানা গেল তিনি রোগী সামলাচ্ছেন হাসপাতালে। ফাঁকা হয়ে দুপুর নাগাদ ফোনে জানালেন, বৃহস্পতিবার বিকেলেই দায়িত্ব বুঝে নিতে ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দফতরে যাবেন তিনি। অতীতে বিজেপি-র চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মধুছন্দা এমনও দাবি করেন যে, পেশা আর সাংগঠনিক কাজ সামলাতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না বলেই মনে করেন তিনি। মধুছন্দা বলেন, ‘‘আমি কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। এ ছাড়াও ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে রোগী দেখতে যেতে হয়। তবে জরুরি পরিষেবা নিয়ে আমায় খুব একটা চাপ নিতে হয় না। দলবদ্ধ ভাবে আমরা চিকিৎসা করি। তাই ব্যালান্স করে চলা যাবে। খুব একটা অসুবিধা হবে না।’’ রোগী না রাজনীতি কাকে বেশি প্রাধান্য দেবেন? মধুছন্দা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বুঝে। কখনও কোনটাকে গুরুত্ব দিতে হবে সেটা সময় অনুযায়ী ঠিক হয়। তবে আমি মনে করি, চাইলে পেশা ও আদর্শের মধ্যে তাল রেখে চলা যায়। দল এবং পেশা কোথাওই আমি একা নই। সব জায়গাতেই টিম হিসেবে কাজ করি। সেটাই করব।’’
প্রায় একই দাবি চিকিৎসক ইন্দ্রনীলের। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি তো কারও পেশা নয়। আমার কাছে এটা সমাজসেবামূলক কাজ। পেশার বাইরেও সমাজের কথা ভেবে কিছু কাজ করতে হয়। আমি রাজনীতিকে কর্তব্য মনে করি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই রাজ্যের যে দুর্দশা তার জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং সক্রিয় আন্দোলনে নামাটা আমার কাছে পবিত্র কাজ। তাই সেটা করব।’’ গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য বিজেপি-র অবস্থাও অনেকটা রুগ্ন। অনেক দিন যুব শাখার সে ভাবে কোনও আন্দোলন হয়নি। সেই অসুখ সারাতেই কি আপনার মতো চিকিৎসকের উপরে ভরসা রেখেছেন রাজ্য সভাপতি? এমন প্রশ্নের উত্তরে ইন্দ্রনীল বলেন, ‘‘সংগঠনের ওঠাপড়া থাকে। সে সব নিয়েই চলতে হয়। আমি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করব। আগে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করব। যুব মোর্চার আগামী দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে কর্মসংস্থান। এই রাজ্যের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কাজের খোঁজে অন্য রাজ্য বা দেশে চলে যেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলের আন্দোলনে নামবে যুব মোর্চা।’’
বিরোধীদের অনেকে ঠাট্টা করে বলছেন, রাজ্যে বিজেপি ‘রুগ্ন’ হয়ে পড়েছে বলেই কি চিকিৎসকদের আনা!