ফাইল চিত্র।
বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসাবে এনডিএ ঘোষণা করেছে। দেখেশুনে বোঝাই যাচ্ছে, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর কোনও অঙ্ক। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই যে ধনখড়ের মতো এক জন জাঠ নেতাকে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করা হয়েছে, তা-ও রীতিমতো স্পষ্ট।
শনিবার সন্ধ্যায় উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসাবে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা বাংলার রাজ্যপাল ধনখড়ের নাম ঘোষণা করেন। তার পরেই জাতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রের শাসকদলের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়। প্রার্থীর নাম ঘোষণার সময় জগদীপকে ‘কৃষকপুত্র’ হিসাবে উল্লেখ করেন বিজেপি সভাপতি। যদিও ধনখড় ঘনিষ্ঠেরা জানেন, কোনও দিন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তিনি। আইনজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি কৃষকপুত্র-পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে। তবে জগদীপকে প্রার্থী করা নিয়ে বিজেপির কৌশলে সুদূরপ্রসারী অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারীরা।
গত বছর এই সময়ে গুরুপূর্ণিমার দিন কৃষক আইন প্রত্যাহার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি চেয়েছিলেন কৃষক আন্দোলনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে। কিন্তু তাতেও দেশের উত্তরাংশের নির্বাচনে জাঠ কৃষকদের ভোট আসেনি বিজেপির ঝুলিতে। লোকসভা ভোটের নিরিখে বিজেপির এই সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের জয়ের নেপথ্যে রাজস্থান, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির বড় ভূমিকা ছিল। শুধু তাই নয়, জাঠ ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির পক্ষে ছিল।
কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হলেও, জাঠদের বিজেপি সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে জাঠদের মধ্যে বিজেপির কোনও বড় নেতাই নেই। তাই রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুকে মনোনয়ন দিয়ে যে ভাবে আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনজাতির ভোট ২০২৪ সালের জন্য নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়েছে, তেমনই জাঠ ধনখড়কে ‘কৃষকপুত্র’ হিসেবে তুলে ধরে কৃষক আন্দোলনের জেরে হওয়া ক্ষত সারাতে চাইছে বিজেপি।
রাজনীতির সমীকরণ বলছে, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাজস্থানের ২৬, হরিয়ানার ১০, দিল্লির সাত এবং উত্তরপ্রদেশের প্রায় ১০টি লোকসভা আসনে জাঠেরা ভোট নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ধনখড়কেই উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়ে জাঠ ভোট নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি। কারণ ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট মিটে গেলে হরিয়ানা, দিল্লির মতো রাজ্যগুলিতে বেজে উঠবে বিধানসভা ভোটের দামামা। আবার লোকসভা ভোটের মাস তিনেক আগেই রাজস্থান বিধানসভার ভোট। এ ক্ষেত্রে নিজেদের আস্তিনে থাকা নিরাপদ জাঠ-তাসটি ব্যবহার করতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
তবে বিজেপির এমন কৌশল কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্নও থাকছে। কারণ বিজেপি যাঁকে ‘কৃষকপুত্র’ বলে প্রচার করছে, তাঁকে আদৌ কৃষকপুত্র হিসেবে জাঠ কৃষকেরা গ্রহণ করবেন তো? জবাব মিলবে চব্বিশের ভোটে।