অভিনেতা তথা খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপির নতুন ঘোষণা। প্রথম বার সাংগঠনিক দায়িত্ব পেলেন অভিনেতা তথা খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে বিজেপির যুব সংগঠন যুব মোর্চার ইনচার্জ করা হয়েছে। যুব মোর্চায় আগে এই ধরনের কোনও পদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু ‘বিশেষ’ প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে অভিনেতা হিরণকে এই পদে আনা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া আরও একাধিক সাংগঠনিক বদল করা হয়েছে বঙ্গ বিজেপির স্তরবিন্যাসে।
লোকসভা ভোট আসছে। তার আগে প্রতিটি দলই জোরকদমে রাস্তার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সিপিএমের যুব শাখার আয়োজনে চলল ইনসাফ যাত্রা। শাসক তৃণমূলও নিজের মতো করে সাজাচ্ছে ছাত্র, যুব সংগঠনের রণকৌশল। পিছিয়ে নেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও। গেরুয়া শিবিরের যুব সংগঠন যুব মোর্চার মুখ করে পরিষদীয় রাজনীতি থেকে তুলে আনা হচ্ছে অভিনেতা হিরণকে। সে জন্য যুব মোর্চার সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রেও পরিবর্তন করা হয়েছে। যুব মোর্চার সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ। পেশায় চিকিৎসক ইন্দ্রনীল কসবা কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু যুব সংগঠনের মুখ হয়ে ওঠার জন্য যে পরিচিতি প্রয়োজন, ইন্দ্রনীলের তা নেই বলেই মনে করছে গেরুয়া নেতৃত্ব। তাই অধিক পরিচিত মুখ হিরণেই ভরসা রাখছেন পদ্ম নেতৃত্ব। ইন্দ্রনীল সভাপতিই থাকবেন। মোর্চায় ইনচার্জ পদ তৈরি করে তাতে বসবেন হিরণ। এই রদবদলের খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তুমুল জল্পনা, তাহলে কি হিরণকেই বিজেপির ‘যুব মুখ’ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে? তাই কি নতুন পদ তৈরি করে তাতে হিরণের অভিষেক? পাশাপাশি, আরও একটি ঘটনাকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ বিধায়ক হিরণের অভিনেতা পরিচয় কি গুরুত্ব পেল? কারণ, শাসক তৃণমূলেরও যুব মুখ অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে অমিত শাহের মঞ্চে বিজেপিতে যোগ দেন হিরণ। তার পরেই পান কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। খড়্গপুর সদর থেকে বিজেপির প্রতীকে ভোটে লড়ে জয়ও পান অনায়াসে। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা খড়্গপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কেবলমাত্র খড়্গপুর সদরেই পদ্ম পতাকা উড়ছে। বাকি সবক’টিই এখন তৃণমূলের দখলে। আবার সেই হিরণের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্ক ‘মধুর’ বললেও কম বলা হয়। দিলীপ আপাতত বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে, অন্য দিকে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিরণের জন্য যুব মোর্চায় তৈরি হল নয়া পদ। বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে শুধু অভিনেতাকে মুখ করাই নয়, বঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক স্তরে হয়েছে আরও একাধিক বদল।
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি চার্লস নন্দী থাকলেও ইনচার্জ পদ তৈরি করে তাতে বসানো হয়েছে মাফুজা খাতুনকে। মহিলা মোর্চার ইনচার্জ হয়েছেন পারমিতা দত্তা। মি়ডিয়া বিভাগে ইনচার্জ আছেন তুষারকান্তি ঘোষই। সেই সঙ্গে কো-ইনচার্জ হিসাবে কালীচরণ সাউয়ের সঙ্গেই জায়গা পেয়েছেন প্রাক্তন সংবাদমাধ্যম কর্মী কেয়া ঘোষ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কলকাতা জোনের ইনচার্জ করা হয়েছে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে। কো-কনভেনার হলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, দু'জনেই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক।