(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আবারও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক এড়িয়ে যেতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার বিরোধী দলনেতার বিধানসভার দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্ন থেকে। তাতে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বিরোধী দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নবান্নে। নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর কনফারেন্স রুমে বিকেল ৩টেয় একটি বৈঠক রয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগের জন্য এই বৈঠক হচ্ছে। তার পরেই বাংলার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নন্দীগ্রামের বিধায়ক কি আদৌ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই ধরনের কোনও বৈঠকে বসবেন? একই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক মহলেও। কারণ গত আড়াই বছরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি কোনও বৈঠকে বসেননি শুভেন্দু। যত বার এই ধরনের কোনও বৈঠকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তখনই সেই বৈঠক এড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাই মনে করা হচ্ছে এ বারের বৈঠকেও একই পন্থা অবলম্বন করবেন তিনি।
বৈঠকে যোগদানের প্রশ্নে শুভেন্দু অবশ্য এখনই নিজের অবস্থান প্রকাশ্যে জানাতে চান না। বৈঠকে যোগদান করবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা বলেন, “আমি আমার সিদ্ধান্ত ঠিক সময় জানাব।” তাঁর এমন মন্তব্যের পরেই মনে করা হচ্ছে নিজের পুরনো অবস্থানে অনড় থেকে বৈঠকে গরহাজির থাকবেন তিনি। গত বছর মানবাধিকার কমিশনার এবং কমিশনের সদস্য নিয়োগ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল বিধানসভায় স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে। সেই সময় আবার বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। তাই বিধানসভার অন্দরে প্রবেশে তাঁর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। তাই বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর, স্পিকারকে চিঠি দিয়ে শুভেন্দু জানতে চান কোন পথ দিয়ে তিনি বৈঠকে যোগদান করতে যাবেন? স্পিকার তাঁকে বিধানসভার অন্দরে প্রবেশ করার অনুমতি দিলেও, শেষ মুহূর্তে বৈঠকে যোগদান করেননি বিরোধী দলনেতা। বরং টুইট (অধুনা এক্স হ্যান্ডেল) করে রাজ্য সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে অভিযোগের সুরে জানিয়েছিলেন, একতরফা ভাবে রাজ্য সরকার নাম প্রস্তাব করে তা পাশ করিয়ে নিতে চাইছে। তাই পূর্বনির্ধারিত নাম নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি যোগদান করবেন না। তাই মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও ১৪ ডিসেম্বর নবান্নে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিজের এক্স হ্যান্ডলেই ঘোষণা করবেন শুভেন্দু।
যদিও, প্রথমে এই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল বিধানসভায়। আগামী সোমবার স্পিকারের ঘরে এই বৈঠকের ঘোষণা হয়েছিল। শুক্রবার বৈঠকের দিন এবং স্থান বদল করেছে নবান্ন। তাতেও বিরোধী দলনেতার মত বদল হবে না বলেই মনে করছে বিজেপি পরিষদীয় দলের একাংশ। কারণ, শীতকালীন অধিবেশনেও স্পিকার শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করেছেন। আর পাল্টা বিজেপি পরিষদীয় দল ঠিক করেছে, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার অধিবেশনে যোগদান করতে এলে তাঁকেও বয়কট করবে তারা। এ হেন সংঘাতের পরিবেশে মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার একসঙ্গে বৈঠক করার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। তা ছাড়া বরাবর বিরোধী দলনেতা বলে আসছেন, “২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর যে ভাবে শাসকদলের দ্বারা বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাতে নবান্নের কোনও বৈঠকে বিজেপির যোগদান করা উচিত নয়।” চলতি অধিবেশনে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে বিজেপি বিধায়কদের স্লোগান দেওয়ার ঘটনাও এই বৈঠকে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই শুভেন্দুর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক যে আদৌ হবে না তা ধরেই নিচ্ছে প্রশাসনের একাংশ।