শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিকে)। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের বকেয়া টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করার ডাক দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অভিষেকের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা তৃণমূলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও হলে সংসদে তৃণমূল সাংসদরা ঢুকতে পারবেন না। পাশাপাশি, তৃণমূলের ‘ঘরে ঢুকে’ রাজনীতি করার সমালোচনা করেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক।
শুক্রবার অভিষেক যখন ধর্মতলায়, তখন তাঁর লোকসভা এলাকা ডায়মন্ড হারবারে ছিলেন শুভেন্দু। পঞ্চায়েত ভোটে ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের খোঁজ নেন তিনি। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আবার ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা উদ্ধারের জন্য দিল্লি যাওয়ার ডাক দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১০০ দিনের টাকা দিল্লির বুক থেকে টেনে আনব। বাংলার প্রতি ধারাবাহিক নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা, অপমান হয়েছে।’’ সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘‘বকেয়া বুঝে নিতে দিল্লি যাবেন তো? দু’লক্ষ ৬৪ হাজার জব কার্ড হোল্ডারের জীবিকা নির্ভর করে ১০০ দিনের কাজের উপর। আগামিদিনে কৃষিভবনের বাইরে ঘেরাও হবে।’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘আগামী ৫ অগস্ট, শনিবার বিজেপির সমস্ত বুথ, অঞ্চল, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্য শান্তিপূর্ণ ভাবে বাড়ি ঘেরাও হবে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। বাড়িতে কোনও বৃদ্ধ মানুষ থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু বিজেপি নেতা বাড়ি থেকে বেরোবেও না, ঢুকবেও না। গায়ে হাত দেবেন না। গণঘেরাও কর্মসূচি হবে। তার পর দিল্লি ঘেরাও হবে। সর্বশক্তি লাগিয়ে দেব। ট্রেনে করে বুকে আশা বেঁধে দিল্লি চলো।’’ এই প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর কটাক্ষ, “আজ ডিম-ভাতের উৎসবে অহঙ্কার দেখুন। ৫ অগস্ট বিজেপির ছোট থেকে বড় নেতাদের বাড়ি নাকি ঘিরবে! নেতাদের বাড়ি বন্ধ থাকবে! বয়স্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেবে না। অভিষেক শুনে রাখুন, আপনার বিরুদ্ধে এফআইআরের কপি নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। এই কর্মসূচিতে মানুষের মৌলিক অধিকার বিপন্ন।’’ বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, “কার বাড়িতে কে ঢুকবে কে বেরোবে তা মানুষের সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। বিজেপির কোনও কর্মীর বাড়িতে যদি এই কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূল যায় তা হলে পার্লামেন্টে তৃণমূল সাংসদদের ঢুকতে দেব না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও বিজেপি নেতার বাড়ি ১০০ মিটার দূর থেকে ঘেরাও করার কথা মমতা বলতে পারেন না।’’
২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করেন। রাজ্যের সব বিজেপি নেতার বাড়ি ঘেরাও করার বিষয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘেরাও বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে করবেন। ইলেকশনে (নির্বাচনে) যেমন ১০০ মিটার দূরে ক্যাম্প হয়। যাতে কেউ বলতে না পারে যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটা একটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ।” এ নিয়ে খোঁচা দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পরে সংশোধন করেছেন। একটু ভুল বলে ফেলেছেন— ‘আমরা গ্রামে গ্রামে করব না। ব্লকে করব। ১০০ মিটার দূরে করব’।’’ যদিও এটা বলাও মুখ্যমন্ত্রীর সমীচীন নয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “এই অসভ্যের রাজনীতি আমরা দেখিনি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, বাড়িতে আক্রমণ, গাড়িতে আক্রমণ! এত সরকার এসেছে, কিন্তু এ রকম করেনি। সিপিএম ৩৪ বছর মিছিলে হামলা করেছে, বোমা মেরেছে। কিন্তু এই কোম্পানি বাড়িতে হামলা করতে বলে। কী সাহস।’’ শুভেন্দু বলেন, তাঁর বাড়ি ঘিরেও একই রকম কাজ করছে তৃণমূল। এ নিয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।