Locket chatterjee

পাঁচলায় ‘বিজেপির মহিলা প্রার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায়’ লকেটের কান্না! কী বলছে পুলিশের তদন্ত

মণিপুরের ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়ো নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য একটি ভাইরাল ভিডিয়ো যা পাঁচলার বলে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়ে মমতা সরকারকে বিঁধলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৭:৪১
Share:

পাঁচলার ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কান্না সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের (বাঁ দিকে)। সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও মণিপুর ইস্যুতে মোদীকে বিঁধেছেন মমতা। তার প্রায় মিনিট ৩৫ পর নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলার পরিস্থিতির সঙ্গে মণিপুরের অবস্থার তুলনা করলেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, শুক্রবার বিকালেই রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য সাংবাদিক বৈঠক করে পাঁচলার ঘটনা প্রসঙ্গে জানান, ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারিণী তাঁর অভিযোগ মতো শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখাতে পারেননি। ইমেল মারফত অভিযোগ দায়ের পর একাধিক বার অভিযোগকারিণী এবং তাঁর পরিবারকে পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোনও সাড়া মেলেনি।

Advertisement

শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে লকেটের সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তাঁদের বক্তব্য, বাংলায় মহিলাদের অবস্থা মণিপুরের মতো। এ রাজ্যেও মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়। আক্রমণ হয়। কিন্তু সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয় না। বাংলায় মহিলাদের পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রীতিমতো কেঁদেই ভাসালেন লকেট। তাঁর কথায়, “মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। খুব কষ্ট হচ্ছে। যে ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তা অত্যন্ত কষ্টকর। আর বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের নাম করে যে খুন-সন্ত্রাস এবং মহিলাদের উপর নির্যাতন হল, সেটাও কষ্টের। সেটাও বাংলার একটি চিত্র।” লকেটের সংযোজন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও বার বার বাংলায় মহিলাদের নির্যাতিত হতে হয়। ৮ জুলাই পাঁচলায় এক মহিলা প্রার্থীকে বুথের ভিতর ঢুকে বিবস্ত্র করে তাঁর গোপনাঙ্গে হাত দেওয়া হয়েছে। ডোমজুড়ে তৃণমূলের প্রার্থীর কাউন্টিং রুমের মধ্যে ঢুকে অত্যাচার করা হয়েছে। এফআইআর হয়েছে দুটি ক্ষেত্রেই। আসলে ওখানকার কোনও ভিডিয়ো হয়নি। কেউ ভিডিয়ো করতে পারেননি। সেখানে তো কেউ ঢুকতেই পারেননি। কারণ, সেখানে বন্দুক নিয়ে ছিলেন সকলে। গণনাকেন্দ্রের মধ্যেই মহিলার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে নগ্ন করা হয়েছে। এর কোনও বিচার হবে না?” এই কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন বিজেপি সাংসদ। কালিয়াগঞ্জ ধর্ষণকাণ্ড প্রসঙ্গ তুলে ধরে লকেট বলেন, “কালিয়াগঞ্জে এক রাজবংশী মহিলাকে অত্যাচার করে খুন করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে দেহটা। সেটার ভিডিয়ো অবশ্য সামনে এসেছে। আমরাও মহিলা। আমাদের (বাংলার) মেয়েরা কোথায় যাবেন। আমরাও তো বাংলার মেয়ে। মণিপুরেও দেশের মেয়ে রয়েছে। আমরাও দেশের মেয়ে। প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন।’’ বলতে বলতে আবার কেঁদে ফেলেন তিনি। কাঁদো কাঁদো স্বরে লকেট বলেন, “ভিডিয়ো যখন ভাইরাল হবে, তখনই আমরা কথা বলব? মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হয়েও চুপ রয়েছেন।” তাঁর সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঘটনা দেখলেই বলবেন, ‘ছোট ঘটনা।’ নির্বাচনে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মুখমন্ত্রী বললেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। মহিলাদের সঙ্গে কিছু হলেই উনি বলে দেন প্রেম ছিল। প্রেম থাকলে কি নির্যাতিত হতে হবে? আমরা কোথায় যাব?” শেষে তাঁর সংযোজন, “মণিপুরের যা পরিস্থিতি, বাংলারও তাই পরিস্থিতি। উনি (মমতা) লোক পাঠান মণিপুরে, আগে বাংলাকে সামলে নিন। পরে মণিপুরে যাবেন।”

উল্লেখ্য, বুধবার হাওড়ার আমতায় এসেছিল বিজেপির মহিলাদের নিয়ে তৈরি তথ্যানুসন্ধান দল। পঞ্চায়েত ভোটের পর বাংলায় মহিলাদের উপর হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখেন পাঁচ সদস্য। ওই দিনই মণিপুরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল। ঘটনাক্রমে তার পরে মণিপুরের একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ঘটনা নিয়ে ধর্মতলার মঞ্চ থেকে মোদী সরকারকে একযোগে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন লকেট। পরে তিনি বলেন, “আমি ক্ষমা চাইছি, আমি একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এটাই বাংলার পরিস্থিতি।”

Advertisement

অন্য দিকে, এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ডিজি মালব্য এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত ১৩ জুলাই ইমেল মারফত একটি অভিযোগ দায়ের হয় হাওড়া গ্রামীণে। নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, তাঁর কাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৪ জুলাই পুলিশ এফআইআর দায়ের করে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সাপেক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’’ তাঁর সংযোজন, পুলিশ বার বার নির্যাতিতা এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু তাঁদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ডিজির কথায়, ‘‘ভিক্টিমকে মেসেজ করা হয়েছে যে আপনারা থানায় আসুন। কোর্টে গোপন জবানবন্দি দিন।’’ কিন্তু অভিযোগকারিণী বা তাঁর পরিবারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি বলে দাবি পুলিশের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement