Satish Dhond

বিজেপির ‘আড়ালের নেতা’ সতীশ আচমকা কেন বিধানসভায়? ধন্ডের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ঘিরে ধন্দ

গোয়ায় বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে তিনি বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে গেরুয়া শিবির দাবি করে। সেই সতীশ ধন্ড বাংলায় এলেও এত দিন আড়ালেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দেখা গেল, কিন্তু মুখ খুললেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৫
Share:

সতীশের সফরে জল্পনা। — ফাইল চিত্র।

বাজেট পেশের পরের দিন বিধানসভায় অন্য বিজেপি বিধায়কেরা থাকলেও আসেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিধানসভায় আচমকা হাজির হন রাজ্য বিজেপির যুগ্ম সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ড। তিনি এখন রাজ্যের দায়িত্ব পেলেও আসলে কেন্দ্রীয় নেতাই। ছ’মাসের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে তিনি বাংলার দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁকে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার দেখা গেলেও সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সতীশ এর আগে ছিলেন গোয়ার দায়িত্বে। সেখানে দলকে ক্ষমতায় আনার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় আশাভঙ্গ হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২১ জুলাই বাংলার দায়িত্ব পান সতীশ। বিজেপিতে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে এখন সেই দায়িত্বে রয়েছেন অমিতাভ চক্রবর্তী। পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) হিসাবে যোগ দেন সতীশ। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে আড়ালে থেকে কাজ করা নেতাদের মধ্যে সতীশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।

সেই সতীশ আচমকা কেন বিধানসভায় এলেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। যদিও বিজেপির তরফে এটাকে দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে সতীশের ‘সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ’ বলেই দাবি করা হয়েছে। একসঙ্গে সব বিধায়ককে পাওয়া যাবে বলেই তিনি বিধানসভায় গিয়েছিলেন। যদিও বিজেপির অন্য একটি সূত্র বলছে, সতীশ নিজেই রাজ্য বিধানসভায় গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সকলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, আসানসোল দক্ষিণের অগ্নিমিত্রা পাল, কল্যাণীর অম্বিকা রায়-সহ কয়েক জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। বিরোধী দলনেতার ঘরে রুদ্ধদ্বার কথার সময়ে সাংবাদিকদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। ঘণ্টা দুয়েক বিধানসভায় কাটালেও কী কারণে এই সফর তা নিয়ে তিনি একটি কথাও বলেননি। এসেছিলেন একা, এবং বেরিয়েও যান একাই।

Advertisement

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতেই কলকাতায় রাজ্য বিজেপির একটি বিশেষ চিন্তন বৈঠক হয়। সেখানে অমিতাভ, সতীশের পাশাপাশি হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রধান চার পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়া। বৈঠকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছাড়াও ছিলেন দুই সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি সূত্রে খবর, নিউ টাউনের এক হোটেলে বসা ওই শীর্ষ বৈঠকে রাজ্যে কী ভাবে বুথ স্তরের সংগঠন আরও মজবুত করা যায়, তা নিয়ে মূলত আলোচনা হয়। আগামী দিনে কী কী কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে তা-ও ছিল আলোচনায়। পদ্মের আগামী লড়াইয়ের ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরির বৈঠকের পরের দিনেই সতীশের বিধানসভা সফর কেন, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। তবে গেরুয়া শিবির সূত্রে এটুকু জানা গিয়েছে যে, সংগঠন বিস্তারে বিধায়কদের কী ভাবে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে আলোচনাই ছিল ধন্দের মূল লক্ষ্য।

বিজেপির অন্দরে সতীশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে মনে করা হয়। গোয়ায় বিজেপির প্রধান নেতা ছিলেন মনোহর পর্রীকর। দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী পর্রীকরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন আরএসএস প্রচারক সতীশ। কিন্তু পরে বিজেপি সতীশকে মহারাষ্ট্রের দায়িত্বে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু ২০১৯ সালে আচমকা পর্রীকরের মৃত্যুর পরে সতীশকে ফিরিয়ে আনা হয় গোয়ায়।

গোয়ার জাতপাতের যে বিভাজন রয়েছে সে বিষয়ে অভিজ্ঞ সতীশই গত বিধানসভা নির্বাচনের মূল পরিকল্পনা করেন বলে জানা যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অত্যন্ত ভরসার সতীশ যে ৪০ আসনের গোয়ায় বিজেপির ক্ষমতা দখলের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন তা বোঝা যায় ফল ঘোষণার পরে। লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফলের লক্ষ্যে থাকা বাংলায় তার পরেই পাঠানো হয় তাঁকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement