আলিপুর কোর্টে রাকেশ সিংহ। ছবি: রণজিৎ নন্দী
রাত সওয়া ১১টা। দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে লাউঞ্জের চেয়ারের পিছনে মুখ লুকিয়ে বসে আছেন এক যাত্রী। এক সময় পুলিশের নজরে এল, ওই যাত্রী মোবাইল ফোনে বিদেশ যাওয়ার বিমান-টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। বিমানের টিকিট কাটা অপরাধ নয়। তা হলে এমন ঢাকঢাক গুড়গুড় কেন? সন্দেহ গাঢ় হতেই এগিয়ে যায় পুলিশ। তারা চিনতে পারে, লোকটি আর কেউ নয়, গা-ঢাকা দেওয়া রাকেশ সিংহ।
ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশকর্মীদের মারধর করে খুনের চেষ্টার অভিযোগে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় ওই বিমানযাত্রী, বিজেপি নেতা রাকেশকে। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগও রয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। বিমানবন্দরে গ্রেফতার পর্ব অবশ্য সহজে মেটেনি। পুলিশ ধরতে গেলে রাকেশ এবং তাঁর সঙ্গীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ওই অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ৬ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, রাকেশের বিরুদ্ধে পুলিশকর্মীদের কাজে বাধা দিয়ে মারধর করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। বিমানবন্দরে গ্রেফতারের সময়েও তিনি একই ভাবে বাধা দেন পুলিশকর্মীদের। মঙ্গলবার রাকেশকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। তিনি সওয়ালে বলেন, যে-সব পুলিশকর্মীকে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা উর্দি পরে ছিলেন না। সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মাত্র। মারধর করা হয়নি। সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধু ওয়াটগঞ্জের ঘটনায় জড়িত নন, তাঁর বিরুদ্ধে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগও রয়েছে। তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রেখে তদন্ত করা প্রয়োজন। বিচারক ধৃতকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার মামলাতেও রাকেশকে জেরা করার জন্য এ দিন আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। আলিপুর আদালতের বিচারক পুলিশকে নির্দেশ দেন, ব্যাঙ্কশাল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানাতে হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৮ মে সকালে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে মোটরবাইক আরোহী দুই পুলিশকর্মীকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখে লাঠি দিয়ে তাঁদের মাথায় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত রাকেশ এবং তাঁর সঙ্গীরা। সে-দিন পুলিশকর্মীদের ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাকেশের উপরে নজর রাখছিলেন ওই দুই পুলিশকর্মী। নির্বাচনের কাজে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ। উদ্ধার করা হয় দুই পুলিশকর্মীকে। পরে রাকেশের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কনস্টেবল অনুপকুমার ঘোষ।