বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
চার দেওয়ালের মধ্যে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনী লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। রবিবার পূর্বস্থলী ও রামনগরের জনসভা থেকে কার্যত সেই সুরেই বক্তৃতা করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য জুড়ে থাকল দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণের পাশাপাশি মোদী সরকারের জনহিতকর প্রকল্পের প্রচার। তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে যেমন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘নির্মমতা’ বলে কটাক্ষ করেছেন, তেমনই মায়ের মৃতদেহ সৎকার সেরেই বাংলায় বন্দে ভারতের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেওয়ার উদাহরণ টেনে বাংলার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘দরদের’ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের কটাক্ষ, হিমাচলে হেরে বাংলায় এসে জ্ঞান দিচ্ছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ, “তথ্য নিয়ে আসুন, বলুন গত ১০ বছরে বাংলার জন্য কী করেছেন?”
এ দিন সকালে প্রথমে পূর্বস্থলীর কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন নড্ডা। সঙ্গে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরে থানা ময়দানে জনসভায় বক্তৃতা করেন তিনি। সেখান থেকে নড্ডা যান রামনগর আরএসএ ময়দানে। সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও ছিলেন।
বক্তৃতায় নড্ডা রাজ্যের শাসক দলকে দুর্নীতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, “দিদি তো বলেন এগিয়ে বাংলা। হ্যাঁ ঠিকই। বাংলা দুর্নীতিতে এগিয়ে। অত্যাচারে এগিয়ে।” এর পরেই নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সরকারি কোষাগার ফাঁকা, খুঁজে দেখো টালির চালে জনতার টাকা।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “চাকরি বিক্রি কোটি কোটি, লুট করেছে হাওয়াই চটি।” মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ও দিদি আপনার নাম তো মমতা, আপনি কবে থেকে নির্মমতা হয়ে গেলেন?” রামনগরের সভা থেকে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “টিএমসি’র টি মানে তোলাবাজি, টেরর, এম মানে মাফিয়া, মানি লন্ডারিং, সি মানে কোরাপশান, কমিশন।”
এ বিষয়ে দিল্লি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে পাল্টা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই সব কথা তো উনি বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে বলে আসছেন। উনি যদি বলেন তৃণমূল মানে টেরর, আমি বলব বিজেপি মানে ভারতীয় যাত্রা পার্টি, বাংলা জ্বালাও পার্টি?” তাঁর সংযোজন, “যেখানে ডাবল ইঞ্জিন সরকার চলছে সেখানে দেখুন মানুষের পরিষেবার কী অবস্থা। আর পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখে যান। পরের বার যখন আসবেন আপনি আপনার সরকারের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসবেন, আমি আমার সরকারের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে বসবো। তা হলেই বুঝতে পারবেন আপনার সরকার আর আমাদের সরকারের তফাৎ।”
পাশাপাশি, মহিলাদের উপরে অত্যাচার নিয়েও রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নড্ডা। তাঁর বক্তব্য, “যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা, সেই রাজ্য মহিলাদের উপর অত্যাচারে চার নম্বর, অ্যাসিড হামলায় এক নম্বর, মহিলাদের অপহরণে তিন নম্বর আর পণ না পাওয়ায় বধূ হত্যায় দেশের মধ্যে এক থেকে পাঁচের মধ্যে। আপনারাই বলুন এমন সরকার রাখবেন?” অভিষেকের কটাক্ষ, “আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ না করে আপনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁর অধীনে থাকা এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে কলকাতা মহিলাদের জন্য নিরাপদতম শহর।”
একই সঙ্গে নড্ডা এই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারকে ফেলে দেওয়ার ডাক দেন। সেই সঙ্গে বাংলায় বিজেপি সরকার গঠনের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “এক ধাক্কা অউর দো।” পাল্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০২১ সালেও তো বলেছিলেন। বললে হবে না। করে দেখাতে হবে।”
শুধু তৃণমূলকে আক্রমণ করাই নয়, সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশে’র দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি টেনে আনেন বন্দে ভারতের উদ্বোধনের কথা। তাঁর কথায়, “৩০ ডিসেম্বর মায়ের শেষকৃত্য সেরে প্রধানমন্ত্রী বাংলার রেল প্রকল্পের উদ্বোধনে অংশ নিয়েছিলেন।” সেই সঙ্গে তিনি মোদী জমানায় যে বাংলায় একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে সেই দাবি করেন। তাঁর বক্তব্য, “এ বারের বাজেটে কলকাতায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৫ কোটি ও ৬৩ কোটি টাকা। আইএসআই-য়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, “শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, পশ্চিম মেদিনপুরের সঙ্গে জাতীয় সড়কের সংযোগ করতে সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।” বাংলায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন নিয়েও এ দিন সরব হয়েছেন নড্ডা। তাঁর কথায়, “দিদির প্রশাসন কোনও কাজ করে না। শুধু নাম চুরি করে।”
নড্ডাকে পাল্টা আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “বাংলায় হেরেছিল বলে বাংলার মানুষকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে বিজেপি। ১৭ লক্ষ পরিবারকে বঞ্চিত করেছে। ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে। আপনি দুর্নীতির কথা বলছেন। তার আগে বাংলা আবাসের জন্য যে তালিকা পাঠিয়েছে, তার মধ্যে একটা অযোগ্য নাম আপনি বার করে দেখান।”