মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
নির্বাচনের প্রচারে মিছিল করলেও কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনে কলকাতায় প্রথম বার পথে নামলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর মিছিল শুরুর আগেই নিজের অতীত পরিচয় টেনে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআই নেওয়ার আগেই পুলিশ তথ্যপ্রমাণ ‘লোপাট’ করে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিজিৎ। পাশাপাশি জানিয়েছেন, তিনি বিচারপতির চেয়ারে থাকলে এই সময়ে কী করতেন। অভিজিতের কথায়, ‘‘আমি যদি বিচারপতির চেয়ারে থাকতাম, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতাম!’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যে নারীর নিরাপত্তা নেই। অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জায়গায় তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। তথ্য লোপাটের কাজে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নেমে পড়েছেন।’’
বুধবার কলেজ স্ট্রিট থেকে বিজেপি মহিলা মোর্চার ডাকে একটি মিছিল বের হয়। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সেই মিছিলে যোগ দেন সাংসদ তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এক জনকেই গ্রেফতার করেছে। যাকে ধরা হয়েছে, তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গেই। দেহে আঁচড়-কামড়ের দাগ আছে কি না, সেটা দেখা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি ছিল। অথচ প্রমাণ লোপাটের জন্য পুলিশ সে সব করেইনি। ফলে মামলাটি আদালতে গেলে অভিযুক্তের উকিল তো বলবে, ধর্ষণে প্রতিরোধ হিসেবে গায়ে আঁচড়-কামড়ের দাগ থাকার কথা। এর গায়ে তো সে রকম কোনও দাগ নেই! তা হলে বুঝতেই পারছেন, পুলিশ দিয়ে কী ভাবে মামলার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে!’’ এই মন্তব্যেও মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এ সব করেছে পুলিশ। তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা উচিত।’’
অভিজিতের দাবি, রাজ্যে আইনের শাসন চলছে না। তিনি বলেন, ‘‘বিচারপতি থাকার সময়েই আমি বলেছিলাম, এই রাজ্যে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে। এ বার সেটা ফের প্রমাণিত হল।’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কী ভূমিকা হওয়া উচিত, তা নিয়েও মুখ খোলেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘একটি হাসপাতালের মধ্যেই চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুন! ভাবা যায়? এখনই রাজ্যপালের উচিত ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রস্তাব দেওয়া। আমি তাঁর কাছেও আর্জি জানাচ্ছি।’’
বুধবার বিজেপির মিছিল যখন আরজি কর হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছয়, তখন কিছুটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাম সমর্থকদের একটি মিছিলও ঠিক ওই সময়েই হাসপাতালের সামনে পৌঁছয়। দুই মিছিল মুখোমুখি হতেই দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই দু’পক্ষকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।