নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল। —ফাইল চিত্র।
শনিবারই জানিয়েছিলেন, ইস্তফাপত্র জমা দেবেন। আর রাজনীতিতে থাকতে চান না বলে সমাজমাধ্যমে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টও করেছিলেন। তমলুক বিজেপির সহ-সভাপতি সেই প্রলয় পালের মানভঞ্জন হল রবিবার। জানিয়ে দিলেন, তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন না। দলের সঙ্গেই থাকছেন।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দু অধিকারী-ঘনিষ্ঠ প্রলয় দলেই থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, দলের সহকর্মী এবং সমর্থকদের অনুরোধে তিনি রাজনীতি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন আগে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলাম। রাজনীতি করতে এসে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছিলাম আমি। যখন দুই শতাংশ ভোট ছিল, সেই সময় থেকে বিজেপি করছি। কিন্তু কোথাও যেন মনে হয়েছিল, চোখের সামনে এ ভাবে দলের ক্ষতি দেখার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল। আবেগ থেকে তাই ওই পোস্ট করেছিলাম।’’
নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় সাংগঠনিক জেলা কমিটির পদাধিকারীদের নাম ঘোষণার পর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। শুক্রবার তালিকা প্রকাশের পর জেলায় দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান। তার পর নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন— ‘‘ভাল থেকো রাজনীতি। আর নয়। দাও বিদায়।’’ শনিবারও প্রলয় ‘বেসুরো’ ছিলেন। বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি ফিরলেই তাঁর কাছে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা করে আসব। সেই সঙ্গে আমাকে সহ-সভাপতির পদে বসানোর জন্য ওঁকে ফুল এবং মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসব।’’ ‘বিদ্রোহী’ নেতাকে নরম করার চেষ্টা চলছিল দলের অন্দরে।
বিজেপিতে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন প্রলয়। দলের অন্দরের খবর, তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন নন্দীগ্রামের দলবদলু নেতা পবিত্র কর। সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বয়াল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির জয়ী সদস্য তিনি। তাঁর স্ত্রী এই পঞ্চায়েতের প্রধান। আর এই পবিত্রের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব প্রলয়ের। ফলে পবিত্রের একাধিক পদ পাওয়া নিয়েই তাঁর অসন্তোষ অনুমেয়। পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে বিজেপির মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় নন্দীগ্রামে বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী তাঁর দুই পাশে প্রলয় এবং পবিত্রকে নিয়ে মিছিল করে দলীয় ঐক্যের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা তাতে মেটেনি। রবিবার দল না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অনুমান করা হচ্ছে, তাঁর মানভঞ্জন হয়ে গিয়েছে। দলীয় নেতারা তাঁকে বুঝিয়ে ‘বিদ্রোহ’ ঠেকাতে পেরেছেন।
প্রলয় যখন শুধু বিজেপি নয়, রাজনীতিই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তখন দলের অন্দরেই এমনটা শোনা গিয়েছিল যে, তমলুক জেলার নতুন সভাপতি তথা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের বিরুদ্ধেই যত ক্ষোভ। যদিও তা একটি বারের জন্যও বলেননি প্রলয়। একই ভাবে চুপ তাপসী। রবিবার তাপসীর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে চাননি। প্রলয়ের মানভঞ্জন কি শুভেন্দুর মধ্যস্থতা? প্রশ্ন শুনে তাপসী বলেন, ‘‘কোনও গোলমাল নেই।’’