Internal Conflict in BJP

বেসুরো প্রলয়, বিজেপিতে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ

পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে বিজেপির মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় নন্দীগ্রামে বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী তাঁর দুই পাশে প্রলয় এবং পবিত্রকে নিয়ে মিছিল করে দলীয় ঐক্যের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

সৌমেন মণ্ডল, আনন্দ মণ্ডল

নন্দীগ্রাম, তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

জেলায় বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলায় শুভেন্দু গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের ক্ষমতায়নের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে ক্ষোভের স্রো‌তও বইতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। পরিবারতন্ত্রের জোর খাটানোর অভিযোগ এনে সরব হচ্ছেন বিজেপির একাংশ। অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।

Advertisement

নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল যেমন সাংগঠনিক জেলা কমিটির পদাধিকারীদের নাম ঘোষণার পর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। শুক্রবার তালিকা প্রকাশের পর জেলায় দলের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান। তার পর নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে লেখেন—‘ভাল থেকো রাজনীতি। আর নয়। দাও বিদায়।'

শনিবার ইস্তফাপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন প্রলয়। কিন্তু এ দিন জেলা সভাপতি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এ দিন প্রলয় বলেন, ‘জেলা সভাপতি ফিরলেই তাঁর কাছে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা করে আসবো। সেই সঙ্গে আমাকে সহ সভাপতির পদে বসানোর জন্য ওঁকে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসব।’’ যদিও তাঁকে নরম করতে জেলা নেতৃত্ব ভিতরে-ভিতরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও দলীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্য এক নেতার কথায়, ‘‘দলের মধ্যে পরিবারতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। যাঁদের আগে কখনও গুরুত্বপূর্ণ লড়াই-আন্দোলনে দেখিনি তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আর যাঁরা আজীবন লড়াই করে এসেছেন তাঁদের কোনও গুরুত্ব থাকছে না। বিজেপিতে পরিবারতন্ত্র চলত না। কিন্তু এখন দেখছি, চলছে।’’

শুক্রবার ঘোষণা করা হয় তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির পদাধিকারীদের নাম। সেখানে সহ-সভাপতি পদে পুনর্বহাল হন প্রলয় পাল। কিন্তু তার পর থেকেই তিনি বেসুরে কথা বলছেন বলে অভিযোগ। দলের অন্দরের খবর, তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন নন্দীগ্রামের দলবদলু নেতা পবিত্র কর। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বয়াল-১ গ্রাম-পঞ্চায়েতের বিজেপির জয়ী সদস্য তিনি। তাঁর স্ত্রী এই পঞ্চায়েতের প্রধান। আর এই পবিত্রের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব প্রলয়ের। ফলে পবিত্রের একাধিক পদ পাওয়া নিয়েই তাঁর অসন্তোষ অনুমেয়।

পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে বিজেপির মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় নন্দীগ্রামে বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী তাঁর দুই পাশে প্রলয় এবং পবিত্রকে নিয়ে মিছিল করে দলীয় ঐক্যের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা তাতে মেটেনি।

লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি’র দুই সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি পদে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের দ্বায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি জেলা কমিটি ও মণ্ডল সভাপতির পদে পুরনো অনেক নেতাকে বাদ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হল, তা নিয়ে দলের মধ্যেই আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছে।

এক দল মনে করছেন, মূলত শুভেন্দুর হাত ধরেই জেলায় বিজেপির এই বাড়বাড়ন্ত। দলের অন্দরে নন্দীগ্রাম পর্বের একাধিক আদি গোষ্ঠীর নেতার ক্ষমতা ছাঁটার পরেও জেলায় বিজেপির ক্ষমতা খর্ব হয়নি, বরং সাংগঠনিক শক্তি ও প্রভাব বেড়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৬টির মধ্যে ৭টি বিধানসভায় জয় পায় বিজেপি। শুভেন্দু নন্দীগ্রামে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারান।পঞ্চায়েত ভোটেও পূর্ব মেদিনীপুরে ভাল ফল করেছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে জেলায় বিজেপি নতুন করে চাঙ্গা হয়েছে। ফলে শুভেন্দুুপন্থী নবীন নেতা-কর্মীদের ক্ষমতায়ন লোকসভা ভোটে দলের পক্ষে ভাল হবে।

কিন্তু বিজেপিরই অন্য অংশের আবার মত, মূলত আদি গোষ্ঠী ক্ষমতা হ্রাসে দলের অন্দরে বিবাদের ফাটল চওড়া হবে। লোকসভা ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিজেপি তমলুক সাংগঠনিক জেলার এক প্রাক্তন জেলা নেতার মতে, ’’জেলায় বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জোয়ার এসেছিল ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। তার আগে থেকে বা তখন থেকে জেলায় দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসা পুরনো নেতাদের বেশীর ভাগ এ বার জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। যাঁরা ক্ষমতায় এসছেন তাঁরা বেশির ভাগই মূলত এক জন নেতার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। এ ভাবে দলের নেতৃত্ব রদবদলে সাংগঠনিক দিক থেকে লাভের বদলে ক্ষতি হবে।’’

এর পাল্টা আবার দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি তথা তমলুক ও কাঁথি লোকসভার ‘ইনচার্জ’ আনন্দময় অধিকারীর বক্তব্য, ’’দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের পদাধিকারী হিসেবে অনেক নতুন মুখ এসেছে। পুরনোরাও রয়েছেন। নতুন-পুরনো সকলকে নিয়েই দল এগোবে। পদাধিকারী যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। তবে তাঁরা সকলেই দলের সঙ্গেই থাকবেন।’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ কোনও নেতার অনুগামী হলেও সবাই বিজেপির অনুগামী। লোকসভার ভোটে দলের প্রার্থীর হয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement