‘ভুখা’ ঢাকতেই ধর্মীয় বিভাজন ‘ইনফোকম’-এ বললেন মুখ্যমন্ত্রী

১৮তম ইনফোকমের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্য ব্যাখ্যা করেন। মমতার দাবি, তাঁর আমলে বেকারত্ব কমেছে প্রায় ৪০%।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

ইনফোকমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার । ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সম্মেলন ‘ইনফোকম’-এর এ বারের ‘থিম’ বা বিষয় ‘উইনিং ইন দিস ভিইউসিএ (ভোলাটাইল, আনসার্টেন, কমপ্লেক্স, অ্যামবিগুয়াস— সংক্ষেপে ভুকা) ওয়ার্ল্ড’। অর্থাৎ, অস্থির, অনিশ্চিত, জটিল ও অস্পষ্ট বিশ্বে জয় ছিনিয়ে আনার কৌশল। দেশের বেহাল আর্থিক দশা ও অনিশ্চয়তা নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধতে বৃহস্পতিবার সেই ‘ভুকা’-কে ‘ভুখা’য় পরিণত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘এই হিন্দি শব্দটির মানে ক্ষুধার্ত। এই শব্দের অর্থ গভীর ও স্পর্শকাতর। দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষিতেও এই শব্দটি উপযুক্ত। শিল্প, কর্মসংস্থানে, সব ক্ষেত্রেই খরা। আর এ সব চাপা দিতেই ধর্মীয় বিভাজনের নীতিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে।’’

Advertisement

১৮তম ইনফোকমের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্য ব্যাখ্যা করেন। মমতার দাবি, তাঁর আমলে বেকারত্ব কমেছে প্রায় ৪০%। দারিদ্র দূরীকরণ, ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু গোটা দেশের আর্থিক পরিস্থিতি প্রায় ‘মহামারী’র জায়গায় পৌঁছেছে। দারিদ্র, বেকারত্ব, পেঁয়াজের দাম, সবই গগনচুম্বী। বর্তমান সময়ের অর্থনীতির সঙ্গে তাই হিন্দি শব্দ, ভুখার মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। যখন ছোট-বড়-মাঝারি বা তথ্যপ্রযুক্তি, সব ধরনের শিল্পেই খরা। এমন আগে কখনও হয়নি। তাঁর মতে, গোটা দেশে এখন অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। ব্যাঙ্ক বা জীবন বিমা

নিগমে টাকা রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা। মমতার কথায়, ‘‘টাকা ঘরে রাখলে নোটবন্দি। আর ব্যাঙ্কে রাখলে লুঠবন্দি। নির্বাচন এলে রান্নার গ্যাসের দাম কমে, আর তা মিটলে বাড়ে।’’ তাঁর অভিযোগ, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মতো রেলেরও বিলগ্নকিরণের কথা ভাবছে কেন্দ্র।

Advertisement

আরও পড়ুন: নিজের কর্মসূচিতে অটল থেকে ফাঁকা বিধানসভা ঘুরে ফিরে গেলেন রাজ্যপাল

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, দেশে লগ্নি না করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন শিল্পপতিরা। তাঁদের সিবিআই, ইডি হানা বা জেলে ঢোকানোর ভয় দেখানোর জন্যই এটা ঘটছে। কোনও শিল্পপতি সমালোচনা করলে তাঁকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। মোদী জমানায় মুখ খোলার স্বাধীনতা নেই বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন শিল্পপতি রাহুল বজাজ। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘রাহুল বজাজের সাহস আছে, তাই বলেছেন। কিন্তু ওঁকেও হয়তো আমার মতো নজরদারিতে পড়তে হবে।’’ তবে একই সঙ্গে শিল্পকর্তাদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘আপনারা হতাশ হবেন না। রাজনীতিতে কখনও কখনও এমন সূর্যাস্তের সময় আসে। কিন্তু আপনারা সাহস করে উঠে দাঁড়ান।’’ একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁরা কখনও এমন ভাবে শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন না।

আরও পড়ুন: আদালতের পথে ধর্ষিতাকে হত্যার চেষ্টা উন্নাওয়ে, ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ তরুণী

দেশের ভয়াবহ আর্থিক অবস্থা ধামাচাপা দিতে ধর্মীয় বিভাজনের নীতিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে বলে দাবি মমতার। তিনি বলেন, ‘‘বাস্তব চাপা দিতে এ সব বলা হচ্ছে। কিন্তু বিভাজনের নীতি কখনও ভাল ফল দেয় না। শান্তির জন্য আমরা সকলে কাজ করব। দেশ, মাটি, ধর্ম ও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement