BJP

BJP: হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছাড়লে সাজা হবে কী, বিদ্রোহ দমনের পথ খুঁজছে বিজেপি

গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, যাঁরা বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের সহজে গ্রুপে না ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য নানা রকম সাজার কথা বলা রয়েছে দলীয় সংবিধানে। অনেক নজিরও রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোথাও বলা নেই দলের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দিলে নেতা, বিধায়ক, সাংসদ এমন কী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তবে দলের সংবিধানে কোনও নিদান না থাকলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাইছেন না বিজেপি নেতারা। আপাতত তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, যাঁরা বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের সহজে আবার গ্রুপে যাতে না ফিরিয়ে নেওয়া হয় তেমনই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এ বিষয়ে দলের নীতি, ইচ্ছ‌া মতো ছেড়ে বেরনো গেলেও ইচ্ছা মতো ফিরে আসা যাবে না।

Advertisement

সম্প্রতি যেন বিজেপি-তে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার সংক্রমণ শুরু হয়েছে! কিছু দিনের মধ্যে প্রথমে পাঁচ মতুয়া বিধায়ক, তার পরে বাঁকুড়া জেলার বিধায়করা। তারও পরে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সেই বিপ্লবের ঢেউ নিস্তরঙ্গ হওয়ার আগেই খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। প্রচারের বাইরে থাকা সংখ্যাও নেহাত কম নয়। একের পর এমন খবর আসায় কিছুটা হলেও চাপে রাজ্য বিজেপি নেতারা। এক জনকে ব‌ুঝিয়েসুঝিয়ে গ্রুপ-ঘরে যেই না ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হচ্ছে তার মধ্যেই আবার নতুন কেউ হোয়াটস্অ্যাপ বিদ্রোহে সামিল হয়ে যাচ্ছেন।

রাজ্য নেতারা বলছেন, দলের সংগঠনকে মজবুত করতেই হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপের উপরে নির্ভর করা হয়েছিল। ওই অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী একটি গ্রুপে সর্বাধিক ২৫৬ জনকে রাখা যায়। সেই কারণে, একই বিষয়ের একাধিক গ্রুপ করতে হয়েছে রাজ্যের হাজার হাজার নেতাকে জায়গা দিতে। কে কত গ্রুপে রয়েছেন তার হিসেবও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নেই। তাই কারও কোনও বিষয়ে গোঁসা হলেই কোনও একটা গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে বিদ্ৰোহ দেখাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু এটা কোনও পথ নয়। দলের কমিটি ছেড়ে দিলেও নেতৃত্ব পদক্ষেপ করতে পারেন কিন্তু গ্রুপ ছাড়লে কী করা যাবে! যখন দলের সংবিধান তৈরি হয়েছিল তখন তো আর গ্রুপ, গ্রুপের ভিতরে গ্রুপ এ সব ছিলই না। বিজেপি নেতৃত্বের এমনটাও দাবি যে, এটা নতুন অসুখ। এর সংক্রমণ অন্য দলেও হতে পারে। আর সকলেই গ্রুপত্যাগীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তায় পড়বেন। কারণ, এর কোনও নীতি নির্ধারিত নয়।

Advertisement

রাজ্য বিজেপি-তে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ রাজনীতি নতুন কিছু নয়। অনেকে বলছেন, দলে এমন বিদ্রোহের প্রণেতা প্রাক্তন রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বছর দুয়েক আগেই তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতানৈক্য হওয়ায় তাঁর তৈরি করা বিভিন্ন জেলার যুব মোর্চা নেতাদের নিয়ে তৈরি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ভেঙে দিয়েছিলেন। আবার নিজেও গ্রুপ ত্যাগে অংশ নিয়েছেন। সেটা গত বিধানসভা নির্বাচনের পরেও ঘটেছে।

গত ৫ জুন সৌমিত্রর লোকসভা এলাকা বিষ্ণুপুরে একটি সাংগঠনিক বৈঠকে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তখন রাজ্য সরকারের ঘোষণায় বাংলায় ‘সামুহিক আত্মশাসন’ পর্ব চলছিল। সেই সময়ে কলকাতায় থাকা সৌমিত্র বৈঠকে যোগ দিতে না গিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘লকডাউন চলছে। মিটিং-মিছিল বন্ধ আছে। রাজ্য সরকারের সেই লকডাউনের সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েই আমি বৈঠকে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এই বক্তব্যের চেয়ে সেই সময় বেশি জল্পনা শুরু হয় দলের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে সৌমিত্রর বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে। পরে অবশ্য সৌমিত্র ফিরেও আসেন দলের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের তৈরি করা সেই গ্রুপে।

হোয়াটস্‌অ্যাপ গ্রুপ রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে উঠে আসা সৌমিত্র এখন মনে করেন, এই সব গ্রুপ না থাকাই ভাল। তাঁর থেকেই এই ‘অসুখ’ সংক্রমিত কি না সে প্রশ্ন এড়িয়ে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘বড় সংসারে খুঁটিনাটি নিয়ে খুনসুটি লেগেই থাকে। হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দেওয়া মানে তো আর দল ছেড়ে দেওয়া নয়। এটা ইস্তফা নয়। আমি মনে করে অপ্রয়োজনের গ্রুপ না থাকাই ভাল। গ্রুপ না থাকলে গ্রুপ ছাড়াও থাকবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement