প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয় আটকে থাকার ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পঞ্জাব সরকার। তিন দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ তো প্রশাসনিক কাজকর্ম। কিন্তু মোদীর কনভয় আটকে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিও নিয়ে ফেলেছে বিজেপি। গোটা দেশে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দলের যুব শাখা মশাল-মিছিল করবে। আর দলের সর্বস্তরের নেতারা মন্দিরে মন্দিরে মোদীর ‘আয়ুষ্কামনা’য় প্রধানমন্ত্রীর নামে পুজো দেবেন। জপ করবেন ‘মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলাতেও মোদীর নামে পুজো দেওয়া চলবে দু’দিন ধরে। টুইট করে সেই জপ কর্মসূচি শুরুও করে দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
ওঁ ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যৌর্মুক্ষীয় মামৃতাত্।।
হিন্দু ধর্মের এই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের পিছনে রয়েছে এক লম্বা পৌরাণিক কাহিনি। এই মন্ত্রটি জপ করলে নাকি মানুষ সব অশান্তি, রোগপীড়া, ব্যাধি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। মার্কণ্ডেয় পুরাণের কাহিনি অনুসারে মহর্ষি মৃকন্ডু এবং তাঁর পত্নী মরুদবতী শিবের সাধণা করে সন্তান পান। নাম রাখেন মার্কণ্ডেয়। তাঁর আবার বাল্যকালেই মৃত্যুযোগ ছিল। কিন্ত ঋষিদের পরামর্শে তিনি মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে শুরু করেন মহাদেবের কাছে। সেই সময় স্বয়ং যমরাজ মার্কণ্ডেয়কে নিতে এসেও ফিরে যান। মহাদেবের বরে দীর্ঘায়ু লাভ করে পরে মার্কণ্ডেয় পুরাণ রচনা করেন শিবভক্ত মার্কণ্ডেয়।
ঠিক একই ভাবে মোদীও যেন দীর্ঘায়ু পান, সেই কামনায় দু’দিনের জপ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। একই সঙ্গে দল মনে করছে, বুধবার মোদীর জীবনের একটি ফাঁড়া কেটে গিয়েছে। তবে এমন ফাঁড়া যাতে আর না আসে তার জন্যই দেশ জুড়ে এই শিবপূজার কর্মসূচি। তবে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ-ও এক ধর্মনির্ভর প্রচারাভিযান হবে গেরুয়া শিবিরের।
বুধবার পঞ্জাবের হুসেইনিওয়ালায় জাতীয় শহিদ স্মারকে কর্মসূচির পর ফিরোজপুরে একটি জনসভা ছিল মোদীর। ঠিক ছিল, সকালে ভাটিন্দা বিমানবন্দরে নেমে হেলিকপ্টারে চেপে গন্তব্যে পৌঁছবেন তিনি। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে রওনা দেন তিনি। ওই যাত্রাপথে একটি উড়ালপুলে ১৫-২০ মিনিট আটকে ছিল প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। তার পর সেখান থেকে কনভয় ঘুরিয়ে বিমানবন্দরে ফিরে আসতে হয় মোদীকে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে সংবাদসংস্থাকে বলা হয়, সেখানে ফিরে এসে মোদী বলেন, ‘‘বেঁচে ফিরতে পেরেছি, এই অনেক! এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী (পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী)-কে আমার হয়ে ধন্যবাদ জানাবেন।’’ পাল্টা দাবিতে বিজেপি-র সব অভিযোগ খারিজ করে দেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিংহ চন্নী। এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছেই। তারই মধ্যে এ বার জপ-পুজো-মিছিল কর্মসূচি বিজেপি-র।
রাজ্য বিজেপি-র তরফে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই পঞ্জাবের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় মশাল-মিছিল করবে যুব মোর্চা। অন্য দিকে, কোন নেতা কোন মন্দিরে পুজো দেবেন এবং জপ করবেন তার তালিকা তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এই কর্মসূচিতে কতটা সাড়া ফেলা যাবে, তা নিয়ে বিস্তর চিন্তায় রয়েছেন রাজ্য নেতারা।