মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরে নিহত বাংলার পাঁচ শ্রমিকের বাঙালি পরিচয় নিয়ে বিজেপি ভেদাভেদের রাজনীতি করছে বলে কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এ রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও ভাবেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি কার্যকর করতে দেবেন না বলেও ফের কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিককে যে ভাবে কাশ্মীরে হত্যা করা হয়েছে, তা ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। এ বার সরাসরি বিজেপির দিকে আঙুল তুলে মমতা বলেন, ‘‘এ রাজ্যে ক্ষমতা পেতে ভোটের সময় বাঙালি-অবাঙালির মধ্যে ভেদাভেদ করে আগুন জ্বালাবে। আর রাজ্যের শ্রমিক কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়ে মারা যাওয়ার পরে বলছে, শ্রমিকরা নাকি বাঙালি নন। ওই নেতারা মিথ্যা কথা বলছেন। রাজ্যের মানুষকে বাঙালি বলে স্বীকার করবে না কেন?’’
উল্লেখ্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান কাশ্মীরে মারা গেলে সে বাঙালি, কিন্তু রাজস্থান বা গুজরাতে মারা গেলে সে মুসলমান।’’ এ দিন তিনি ফের মমতাকে আক্রমণ করে হুগলির ধনেখালিতে বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে বাঙালি মরলেই এখানে ওরা হা-হা করবে। মুর্শিদাবাদে এই রাজ্যের পাঁচজনের মৃত্যুর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী। কেন এখান থেকে দিনে ৪০০ টাকা পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের ওখানে যেতে হবে? এখানে কাজ নেই কেন?’’
সরাসরি ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গে না গিয়েই মমতা বৃহস্পতিবার পোস্তায় একটি জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করে বলেন, ‘‘গুজরাতের মানুষ মারা গেলে তো তাঁকে গুজরাতিই বলা হবে। তা ছাড়া, দেশের যে কোনও প্রান্তে দেশের নাগরিকরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজের জন্য যেতে পারেন। এ তো সাংবিধানিক অধিকার। কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে গিয়ে এ ভাবে খুন হতে হবে কেন?’’ অন্য যে কোনও রাজ্যে থেকে আসা মানুষ এ রাজ্যে শান্তিতে, নির্বিঘ্নে রয়েছেন। কোনও ভাবে কারও উপর যে অত্যাচার করা হয় না, তা দাবি করে মমতার বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে কাউকে পিটিয়ে মারা হয় না। কাউকে বলা হয় না রাজ্য থেকে চলে যাও। আমি গণতন্ত্র, সংবিধান মেনে চলি।’’
এ রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া মানুষদের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে এ দিন রাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেই অন্য রাজ্য থেকে মানুষ জীবিকার সন্ধানে যান। বাংলা থেকে যাওয়া পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক যে ভাবে নিহত এবং কয়েক জন আহত হলেন, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলা এবং এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া।’’
রাজ্যে ঐক্যের বাতাবরণ অক্ষুণ্ণ রাখতে এ রাজ্যে বিজেপিকে কোনও ভাবেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি প্রয়োগ করতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে এনআরসি আনবে বলছে। ওরা ঠিক করে দেবে কে থাকবে আর কে থাকবে না? কেন?’’ বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র তাঁর কাছে নেই বলে আগেই জানিয়েছেন মমতা। এ দিন সে কথা ফের জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আগে তো বাড়িতেই প্রসব হত। কে কবে জন্মাচ্ছে, তার কোনও নথি থাকত নাকি? তা হলে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করে দেশের ক্ষতি করতে চাইছ কেন?’’
দিলীপবাবু অবশ্য এ দিন হুগলির সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের উদ্দেশে আশ্বাস দেন, ‘‘আমার এখানে যতটা অধিকার আছে, আলি হোসেনেরও ততটাই অধিকার আছে। কেউ মুসলমানদের সরাতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় সংখ্যালঘুরা আমাদের ভোট দিয়েছে। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা বা সন্ত্রাসবাদীদের এখানে জায়গা দেওয়া হবে না।’’